রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

অবরোধে বাড়ছে সহিংসতা

অবরোধে বাড়ছে সহিংসতা

বিএনপি জামায়াতের দ্বিতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিনে যানবাহন চলাচল সীমিত ছিল। দেশের বিভিন্ন জেলায় যানবাহনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এরমধ্যে রাজধানীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চারটি বাসে আগুন দিয়েছে দুষ্কৃতীকারীরা। আগুনের ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এদিকে রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাবনার ঈশ্বরদীতে রেলগেট মুহুর্মুুহু বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। এ সময় ১টি ট্রাক ভাঙচুর ও রেললাইনের ওপর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ৬টি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেলেও এ ঘটনায় হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া খাগড়াছড়িতে ট্রাকে আগুন, সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ব্যারিকেড, গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানে আগুন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও এশিয়ান মহাসড়কে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ, নোয়াখালীতে দুই বাসে আগুন,  ঢাকার মেরাদিয়ায় বাসে আগুন, চালক দগ্ধ, উত্তরায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে অবরোধকারীরা। অবরোধের আগের রাতে ১১ যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একইসঙ্গে সারাদেশে র্যাবের ৩০০টি টিম টহল দিচ্ছে। নাশকতা রোধে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে মাঠে আছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির শুরুতে রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খিলগাঁও থানার বনশ্রী এলাকার মেরাদীয়ায় অছিম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। এতে দগ্ধ হয়েছেন সবুজ মিয়া (৩০) নামে এক পরিবহন শ্রমিক। তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। বিকেল ৩টা ৪২ মিনিটের দিকে মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৈতালী বাসে আগুন দিয়েছে অবরোকারীরা। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিস। তবে, ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই বাসের আগুন নির্বাপণ করেন বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এয়ারপোর্ট পরিবহন নামের বাসটিতে আগুন দেয়ার সময় বাসে যাত্রী থাকলেও কেউ হতাহত হননি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কাছাকাছি সময়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মিরপুরের পল্লবী এলাকায় সেতারা কনভেনশন সেন্টারের সামনে শিকড় পরিবহনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছে। তবে আগুনের এসব ঘটনায় প্রাথমিকভাবে কোনো হতাহতের খবর জানা যায়নি। ইশ্বরদীর ঘটনায় জানা যায়, অবরোধের সমর্থনে বিএনপির ২০-২৫ জন যুবক রেলগেটে এসে পরপর ৬টি  ককটেল নিক্ষেপ করে। এরপর রেল লাইনের ওপর আগুন জ্বালিয়ে অবরোধের সমর্থনে শ্লোগান দেয়। রেলগেটের কাছে একটি ট্রাকের হামলা চালিয়ে সামনে গ্লাস ভাঙচুর করে। বিকট শব্দে পর পর ককটেল বিস্ফোরিত হলে লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মুহূর্তেই রেলগেট থেকে শুরু করে বাজার এবং শহরের প্রধান প্রধান সড়কের সকল দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় প্রাণভয়ে সাধারণ মানুষ ছোটাছুটি শুরু করে। রিকশাচালক আলী হোসেন বলেন, ২০-২৫ জন যুবক রেলগেটে এসে পরপর ৬টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। আশপাশ থেকে নারিকেলে ছোঁবড়া, কাগজ ও পলিথিন জড়ো করে রেললাইনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শত শত নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে রেলগেটে পশ্চিমপাশে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর ব্যক্তিগত কার্যালয় ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব মেহেদি হাসানের কার্যালয় ভাঙচুর করে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম গণমাধ্যমে পাঠানো এক খুদে বার্তায় জানান, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আধাসামরিক বাহিনীর আরও ১০ প্লাটুন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকা ও তার আশপাশের জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৭ পাল্টুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ২ দিনের জন্য দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জনজীবন স্বাভাবিক রাখা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা করতে র্যাব ফোর্সেস নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীতে ৭০টি টহল দলসহ ১৫টি ব্যাটালিয়নের প্রায় ৩০০ টহল দল নিয়োজিত থাকবে। দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম চলমান থাকবে জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, কেউ যদি কোনো নাশকতা কিংবা সহিংসতার পরিকল্পনা করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাবের স্পেশাল টিম ও স্টাইকিং ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে। গমপ্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে দুস্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীরা নাশকতা ও সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা এ ধরনের নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে শনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে র্যাব। বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অনলাইনে কেউ কেউ বিভিন্ন উসকানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য বা গুজব ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ভিডিও এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম দুষ্কৃতকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সার্বক্ষণিক সাইবার জগতে নজরদারি রাখছে বলেও জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।


সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন