ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে দিয়ে নতুন করে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে ইসরায়েল। হামাস নিশ্চিহ্ন করার নামে ভূখন্ডটির নিরীহ বাসিন্দাদের ওপর প্রতিদিনই চলছে বর্বর হামলা। মার্কিন মদদে ক্রমেই বাড়ছে ইসরায়েলি এ আগ্রাসনের তীব্রতা; তার সঙ্গে বড় হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলে। সবশেষ এ মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে আরও ১২ ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে আছে নারী এবং শিশুও।
সোমবার (২৪ মার্চ) ভোরে গাজা জুড়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এ হামলার ফলে অবরুদ্ধ উপত্যাকাটিতে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৫০ হাজার। এদের মধ্যে কেবল শিশুই ১৭ হাজার।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, সোমবার ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতের এই পরিসংখ্যানে খান ইউনিসে তাঁবুতে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় নিহত ছয়জন এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরের মাইন এলাকায় একটি বাড়িতে সৈন্যদের হামলায় নিহত চারজনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় দুই নারী নিহত হয়েছেন।
আল জাজিরা আরবির সংবাদদাতারা জানান ভোররাতে গাজার খান ইউনিসের কিজান রাশওয়ান এলাকায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাঁবুতে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে কমপক্ষে ছয়জন নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আগ্রাসন শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩৩ জনে পৌঁছেছে। সেইসঙ্গে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৭৪ জন আহত হয়েছেন এ সময়ে।
এর আগে, গতকাল রোববারও (২৩ মার্চ) গাজায় ৪১ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া ধ্বংস্তূপ থেকে দুজনের মরদেহও উদ্ধার হয়েছে এদিন।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দরে আবারও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং একটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের হুতিরা। হামাসের মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, একটি ‘ফিলিস্তিন ২ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ দিয়ে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরকে লক্ষ্যবস্তু করেছে তারা।
হুতির সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি সফলভাবে তার লক্ষ্য অর্জন করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে। তবে, তাদের দাবি, হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশের আগেই তারা তা প্রতিহত করেছে।
হুতিরা আরও জানিয়েছে, মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ‘ইউএসএস হ্যারি ট্রুম্যান’ এবং বেশ কয়েকটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজেও ‘ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন’ নিক্ষেপ করেছে তারা। যদিও হুতিদের হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর প্রকাশ করেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের অতর্কিত এক হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওইদিন থেকেই ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। হামাস নিধনের নামে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে থাকে অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিকে। ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর আগ্রাসনে বিশ্বের বুকে এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় এ উপত্যকা।
দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের সঙ্গে মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) থেকে রোববার (২৩ মার্চ) পর্যন্ত ৫ দিনে ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল ও বিমান হামলায় গাজায় প্রাণ হারিয়েছে ৭ শতাধিক ফিলিস্তিনি; আহত হয়েছে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি। সবশেষ আজ সোমবার (২৪ মার্চ) ভোর থেকেই গাজাবাসীর ওপর হামলা-অভিযান করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী।