প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যমান ক্ষমতা বহাল রেখে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায়ন করার সুপারিশে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বিএনপি। তবে, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছে দলটি। যেমন, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়; এমন প্রস্তাবের সঙ্গে কমিশনের সঙ্গে একমত থাকতে পারছে না বলে জানিয়ে দিয়েছে দলটি। সেইসঙ্গে একই ব্যক্তি সরকার প্রধান, দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না; এমন প্রস্তাবেও দ্বিমত আছে দলটির।
রোববার (২০ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের বিরতিতে এসব কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না; বিষয়টি এমনভাবে বাধ্যতামূলক না রেখে উন্মুক্ত রাখতে চায় বিএনপি। তবে, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যমান ক্ষমতা বহাল রেখে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতায়ন করার সুপারিশে একমত আমরা।
এছাড়া, অর্থবিল, আস্থা বিল, জাতীয় নিরাপত্তা ও সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়া সংসদ সদস্যরা যেন স্বাধীনভাব নিজেদের মতামত দিতে পারেন, সে ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সালাউদ্দিন আহমেদ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, একই ব্যক্তি সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান হতে পারবে না– এমন চর্চা আমরা দেখি না। যুক্তরাজ্যেও আমরা দেখি, পার্টি প্রধানই সরকার প্রধান। এটি গণতান্ত্রিক চর্চা। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রচলন হয় এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রচলন করা যায়, তাহলে সেই ভোটে যারা ক্ষমতায় আসবে, মনে করতে হবে জনগণ তাদেরকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে।
বিএনপি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে ধর্মনিরপেক্ষ বা বহুত্ববাদ কোনোটাই নেই। তবে কমিশন তাদের প্রস্তাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে থাকা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা যুক্ত করতে বলেছেন। আমরা সেখানে একমত হয়েছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে ইন্টারনেট প্রাপ্তির বিষয়ে একমত বিএনপি। তবে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হয় রাষ্ট্রকে। মৌলিক অধিকার বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়টিও দেখতে হবে। তাই আমরা বলেছি, সংবিধানে অনেকগুলো বিষয় যুক্ত না করে, যা রাষ্ট্রের বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে তাই করতে।
এর আগে, সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিএনপি। আলোচনায় বিএনপির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। সেখানে আছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) প্রথম দিনের বৈঠকে প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকার, আইন বিভাগের সংস্কার নিয়ে আলোচনা করে বিএনপি। সেদিন দিনভর আলোচনার পর আজ দ্বিতীয় দিনের আলোচনার শুরুর আগে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমাদের আলোচনা যে পর্যায়ে ছিল, আজকে সেখান থেকে পুনরায় আলোচনা শুরু হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও জানান, আজকের আলোচনায় জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি), নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, সংবিধান সংস্কারের মতো বিষয় থাকবে। তারা আশা করছেন, বিকেলের মধ্যে সব বিষয়ে আলোচনা সম্পন্ন হবে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। কমিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকে আরও আছেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।