দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতালে গত ২৯ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ২৭৫টি যানবাহন, ২৪টি স্থাপনা ভাঙচুর ও ১১টি অন্যান্যসহ মোট ৩১০টি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি একই সময়ে ২৯০টি যানবাহন, ১৭টি স্থাপনা ও ৬৯টি অন্যান্য স্থাপনাসহ মোট ৩৭৬টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার পুলিশ সদরদপ্তরের পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিনে এসে আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এই কর্মসূচি শুরু হবে আগামী রোববার।
সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বৃহস্পতিবার বিকেলে ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এই ঘোষণা দেন। তিনি জানান, একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে আগামী রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ফের টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ হবে সারা দেশে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।
অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বৃহস্পতিবার সারাদেশে ২৩৩ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ৪২৮টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজিবি সদর দফতর থেকে জারি করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারাদেশে ২৩৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ প্লাটুন ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিজয়নগরে একটি বাস, গাজীপুরে ২ কাভার্ডভ্যান, কুলিয়ারচরে পিকআপ ভ্যান ও রাজশাহীতে ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পরবর্তী হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ২ নভেম্বর ঝালকাঠি জেলায় আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর, ৫ নভেম্বর পিরোজপুর এবং ৬ ও ১৫ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলায় আওয়ামী লীগের ২টি অফিসে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করে।
সদরদপ্তর আরও জানায়, গত ১৯ নভেম্বর গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন বরমী ইউনিয়নের ১৩২ নম্বর গিলাশ্বর মরহুম আ. জব্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনের তৈরি স্কুল ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে বিদ্যালয়টির ৪টি বেঞ্চ ও ১টি টিনের জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গত ২৯ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় কর্তব্যরত অবস্থায় একজন পুলিশ সদস্যসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অবরোধ চলাকালে ৩১ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত রেলওয়েতে ২৪টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, টাঙ্গাইল ও জামালপুরে ৩টি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা মহানগরে ১টি, ময়মনসিংহে ২টি, গাজীপুরে ১টি, নেত্রকোণায় ১টি এবং নওগাঁয় ১টিসহ ৬টি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
কিশোরগঞ্জে ১টি, নোয়াখালীতে ২টি, সিলেটে ১টি, পাবনায় ১টি, দিনাজপুরে ১টি ও গাজীপুরে ৩টিসহ রেললাইনে ৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, সিলেট, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে রেললাইন কেটে ফেলার চেষ্টার ৩টি এবং গাইবান্ধায় রেললাইনের ফিস প্লেট খোলার চেষ্টার ঘটনা ঘটে। পাবনায় ট্রেনে পেট্রোল ও ডিজেল ভর্তি বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জে রেললাইনের উপরে অতিরিক্ত ৩ ফুট লম্বা ৩ ইঞ্চি চওড়া পাত সংযোজন করে নাশকতার চেষ্টা করা হয়।
পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের অনেকেই নিজেদের সম্পৃক্ততা উল্লেখপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পুলিশকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে নাশকতাকারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে 'প্রেস' লেখা জ্যাকেট পরে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, যা জনগণের কাছে এখন স্পষ্ট। ভাঙচুর ও নাশকতামূলক হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশ পুলিশ সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।