জীবনের ব্যস্ততা, খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম, স্ট্রেস সবকিছু প্রভাব ফেলে শরীর ও মনে। বর্তমানে অসংখ্য মানুষ রক্তাল্পতার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু দেহের রক্ত কমে গেলে কী কী লক্ষণ দেখা দেয় সেসম্পর্কে তারা জানেন না। রক্ত কমে যাওয়ার লক্ষণগুলো জানা থাকলে সম্ভাব্য জটিলতা এড়ানো সহজ হয়।
কোন কোন লক্ষণে বুঝবেন দেহে রক্তের পরিমাণ কমে গেছে। চলুন জেনে নিই-
সবসময় ক্লান্ত বোধ করা
রক্তের অভাবে শরীরের কোষগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। ফলে ব্যক্তি সবসময় ক্লান্ত বোধ করেন। এমনকি কঠোর পরিশ্রম না করলেও ক্লান্ত লাগে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কিংবা সিঁড়ি বেড়ে উঠতে ক্লান্ত লাগে। এছাড়াও সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এমন লক্ষণে বুঝবেন আপনার শরীরে আয়রন বা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি রয়েছে।
মাথা ঘোরা এবং মাথাব্যথা
রক্তের অভাব হলে পর্যাপ্ত অক্সিজেন মস্তিষ্কে পৌঁছায় না। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তির প্রায়ই মাথা ঘোরা সমস্যা দেখা দেয়। সঙ্গে থাকে মাথা ব্যথাও। হঠাৎ দাঁড়িয়ে থাকলে মাথা ঘোরে। মাথায় ভারী ভাব লাগে। মনোযোগে ঘাটতি দেখা দেয়। এমন সমস্যা চলতে থাকলে বুঝবেন দেহে রক্তের ঘাটতি হয়েছে।
দ্রুত হৃদস্পন্দন
শরীরে রক্তের অভাব হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হৃদপিণ্ডকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে পারে। কোনো কারণ ছাড়াই হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি রক্তশূন্যতার লক্ষণ। হালকা শারীরিক পরিশ্রমের করলেও বুকে টান অনুভব করা, ঘুমের মধ্যে বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি দেহে রক্ত কমে যাওয়ার লক্ষণ।
ত্বকে ফ্যাকাসে বা হলুদাভ ভাব
ত্বকের হলুদভাব রক্তাল্পতার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। সেসঙ্গে নখ এবং ঠোঁটের রংও পরিবর্তিত হতে পারে। রক্তের পরিমাণ কমে গেলে ঠোঁট নীল বা সাদা হয়ে যায়। নখ সাদা এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। চোখের নিচে কালো দাগ এবং ফ্যাকাসে ভাব দেখা যায়।
শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
রক্তের অভাবে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। ফলে ফুসফুস বেশি কাজ করতে শুরু করে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। হালকা হাঁটার পরেও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়া, গভীর শ্বাস নিতে অসুবিধা ইত্যাদি রক্তাল্পতার লক্ষণ।
চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া
আয়রনের ঘাটতি শরীরে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব দেখা যায় চোখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়রনের ঘাটতি চোখের টিস্যুতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন বহন করতে রক্তকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ফলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
চুল পড়া
হিমোগ্লোবিনের অভাবে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায়। ফলে চুল পড়ে যায় বা পাতলা হয়ে যায়। এটি একটি কম লক্ষণীয় কিন্তু গুরুতর লক্ষণ।
মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
অক্সিজেনের অভাব মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। ফলে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা কঠিন হয়ে পড়ে। রক্তের ঘাটতি হলে ব্যক্তির মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
রক্তাল্পতা দূর করার উপায়
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান। খাদ্যতালিকায় রাখুন পালং শাক, বিট, ডালিম, আপেল, ডাল।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। এটি আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
আপনার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরীক্ষা করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট বা সিরাপ খান।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন।
মনে রাখবেন, রক্তাল্পতা একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা। সময়মতো শনাক্ত করা গেলে এবং সংশোধন করা গেলে এটি সহজেই নিরাময় করা সম্ভব।