রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

বাদ পড়েছেন তিন প্রতিমন্ত্রী সাবেক দুই হেভিওয়েট মন্ত্রী

বাদ পড়েছেন তিন প্রতিমন্ত্রী সাবেক দুই হেভিওয়েট মন্ত্রী

একাদশ সংসদ নির্বাচন ও পরে উপনির্বাচনে জিতে এসেছেন এমন ৭২ জন সংসদ সদস্যকে এবার মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এদের মধ্যে সাবেক দুই হেভিওয়েট মন্ত্রীসহ চারজন পূর্ণ মন্ত্রী এবং বর্তমান তিন প্রতিমন্ত্রীও পাননি মনোনয়ন। এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো এক সংসদ সদস্যকেও বাদ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। বাদ পড়েছেন এমপি নির্বাচিত হওয়া পুলিশের সাবেক এক মহাপরিদর্শকও। রোববার আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে; ফাঁকা রেখেছে নারায়ণগঞ্জ ৫ ও কুষ্টিয়া ২।

২০১৮ সালের সবশেষ নির্বাচনে মহাজোটের শরিকদের ছাড় দেয়া হয়েছিল, এমন আসনগুলোর মধ্যে কেবল এ দুটিতে প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন দল। বাকি সবগুলোতেই মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে।

শরিক ও অন্য দলগুলোকে ছাড় দেয়ার যে আলোচনা আছে, সেটির জন্য এখনও সময় আছে।আগামী ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় আছে। এরপর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগে সমর্থন জানানোর সুযোগ আছে। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ ৫০ থেকে ৭০ জন বা এর চেয়ে বেশি প্রার্থী পাল্টে থাকে। এবারও অনেকেই বাদ পড়তে যাচ্ছেন, এমন আলোচনা ছিল। গত পাঁচ বছর নানা ঘটনায় বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছেন অনেকেই, কেউ কেউ নানা ঘটনায় দল ও নিজ এলাকায় অপাংক্তেয় হয়েছেন, দলের বিবেচনায় কারও কারও জনসমর্থন কমেছে।

একাধিক আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যের বয়স ও স্বাস্থ্যগত বা অন্য কারণে বাদ পড়েছেন। একাধিক আসনে বাবার জায়গায় ছেলেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, জনপ্রিয়তা, দক্ষতা ও যোগ্যতার মানদণ্ডে যারা এগিয়ে আছেন, তাদেরকেই মনোনয়ন দিয়েছে মনোনয়ন বোর্ড।

শতাধিক প্রার্থী বদল এবং ৬৯ জন সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন না দেয়ার কারণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি নির্বাচনেই মানদণ্ডটা নতুন করে যাচাই করা হয়, যার জন্য এই পরিবর্তন।

এবার সবচেয়ে বেশি ১৬ জন সংসদ সদস্য বাদ পড়েছেন ঢাকা বিভাগে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ জন বাদ পড়েছেন খুলনা বিভাগে। রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন করে, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ জন, সিলেট বিভাগে ৬ জন এবং বরিশাল বিভাগে বাদ পড়েছেন মোট তিনজন সংসদ সদস্য।

তিন প্রতিমন্ত্রী: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন কুড়িগ্রাম-৪ আসনে এবার নৌকা মার্কা পাচ্ছেন না। তার জায়গায় বিপ্লব হাসানকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান খুলনা-৩ আসনে মনোনয়ন পাননি। তার জায়গায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনকে বেছে নেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ-৫ আসনে গত নির্বাচনে জয় পাওয়া কে এম খালিদকেও এবার মনোনয়ন দেয়া হয়নি। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর আসনে লড়বেন আব্দুল হাই আকন্দ।

জামালপুর-৪ আসনের মুরাদ হাসানকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের পর দলীয় পদও হারিয়েছিলেন। চলতি বছর তাকে ক্ষমা করে দলের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেয়া হলেও মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। তার আসনে লড়বেন মো. মাহবুবুর রহমান।

বাদের তালিকায় সাবেক মন্ত্রীরাও: ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে চাঁদপুর-১ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তার জায়গায় দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

১৯৯৬ সাল থেকে ফরিদপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকেও পাল্টে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তিনি নবম সংসদ নির্বাচনের পর প্রথমে প্রবাসী কল্যাণ এবং পরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তবে গত সংসদ নির্বাচনের পর আর মন্ত্রিত্ব পাননি। তার আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হককে বেছে নেয়া হয়েছে।

জামালপুর-১ আসনে মনোনয়ন পাননি সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। সেখানে লড়বেন নূর মোহাম্মদ। ১৯৯১ সাল থেকে চট্টগ্রাম-১ আসনে নৌকা নিয়ে লড়ে আসা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও আর ভোট করছেন না। তিনি গণপূর্ত মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন এক সময়। এই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে ছেলে মাহাবুব উর রহমানকে। সাবেক পুলিশ প্রধান নূর মোহাম্মদ একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে জিতে এসেছিলেন। তাকে পাল্টে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে সাবেক আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দকে।

ঢাকা-৭ আসনের হাজী মোহাম্মদ সেলিমকেও পাল্টে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। তার জায়গায় বেছে নেয়া হয়েছে তার ছেলে মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিমকে। 

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন