শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

৩৩৪ উপজেলায় পুনর্বাসিত শতভাগ গৃহহীন পরিবার

ফাইল ছবি

দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২১ জেলার ৩৩৪টি উপজেলার শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ-২ এর প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় মোট ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

এর মধ্যে ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত প্রথম ধাপে ৪৭ হাজার ২১০টি পরিবার, আশ্রয়ণ প্রকল্প (পর্যায়-২: ২০০২-২০১০) পর্যন্ত ৫৮ হাজার ৭০৩ পরিবার এবং আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে (২০১০-২০২২ জুন) পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৬৬০ পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। তাদের সরকারি জমিতে এবং অধিগ্রহণকৃত জমিতে ব্যারাক হাউস নির্মাণ করে পুনর্বাসন করা হয়।

এছাড়া, জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এমন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৩ পরিবারকে নিজস্ব জমিতে ঘর করে দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের খুরুশকুলে একটি বহুতল ভবনে নির্মিত প্রায় ৬৪০টি ফ্ল্যাট জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে বিনামূল্যে হস্তান্তর করা হয়েছে, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ নকশায় করা ৬০০টি বাড়ি, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ১০০টি পরিবার এবং ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত ১০০০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘বাংলাদেশের কেউ গৃহহীন থাকবে না’ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনের বাসস্থান নিশ্চিত করতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আধা-পাকা একক ঘর নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। 

মুজিববর্ষে সারাদেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে জমিসহ আধা-পাকা বাড়ি দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্য অনুযায়ী, ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭০৭টি ভূমিহীন-গৃহহীন-দুস্থ পরিবারের জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট একক ঘর, পুরাতন জরাজীর্ণ ব্যারাক সংস্কার করে ১ হাজার ৭৩টি আধা-পাকা একক ঘর এবং ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিবন্ধী পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ৭১টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ।

আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আশ্রয়ন-২ প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশিকা এবং দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসন নীতি ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে।

তার সামঞ্জস্য রেখে সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হয়। এছাড়াও প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান, তদারকি, মনিটরিং ও পরিদর্শনের জন্য বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার এ প্রকল্পের মাধ্যমে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে উন্নয়নের মূল স্রোতে নিয়ে আসতে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

এছাড়া, জলবায়ু উদ্বাস্তু, সংখ্যালঘু, তৃতীয় লিঙ্গ, ভিক্ষুক, বেদে, দলিত, বাগদি ও হরিজনসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে জমিসহ ঘর দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

প্রতিটি ঘর একটি পরিবারের সামগ্রিক কল্যাণের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের এই নতুন পদ্ধতি 'শেখ হাসিনা মডেল' হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হয়েছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিভাগের মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়ীসহ ২১ জেলার সকল উপজেলা; ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ ও শেরপুর; রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও; রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ; খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও কুষ্টিয়া এবং বরিশাল জেলার পিরোজপুর ও ঝালকাঠি সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হয়েছে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের ভূমিহীন, গৃহহীন, দুস্থ ও অসহায় মানুষকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লক্ষ্মীপুর জেলার (তৎকালীন বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা) রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে যান এবং ভূমিহীন-গৃহহীন-নিঃস্ব মানুষদের পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশেই স্বাধীন বাংলাদেশে ভূমিহীন, গৃহহীন, নিঃস্ব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন শুরু হয়।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান এবং বঙ্গবন্ধুর জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কর্মকা- পুনরায় শুরু করেন। তাই তিনি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন মডেল’ সামনে এনে অনগ্রসর ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় আনতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন।

১৯৯৭ সালের ১৯ মে একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন পরিদর্শন করেন। তিনি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুচ্যুত পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেন।

তার নির্দেশনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার দান করা জমিতে প্রথম পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিহীন, গৃহহীন ও দুস্থ পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমি ও ঘর প্রদানের এটিই ইতিহাসে প্রথম ও বৃহত্তম উদ্যোগ। দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় আনার জন্য জমির স্থায়ী মালিকানাসহ বিনামূল্যে বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জমি কেনার জন্য স্বল্প সুদে ঋণের উদাহরণ পাওয়া গেলেও বিনামূল্যে বাড়িসহ জমির মালিকানা দেয়ার ঘটনা বাংলাদেশেই প্রথম।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন