মাত্র এক দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে লাফিয়ে বাড়ল পেঁয়াজের দাম। প্রতিবেশী দেশ ভারত রপ্তানী বন্ধ করায় আবারও সক্রিয় হয়েছে সেই পুরনো সিন্ডিকেট। ভারতের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থান ভেদে প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখানেই শেষ নয় বিভিন্ন হাতঘুরে পেঁয়াজের দাম কোথাও কোথাও আরও বেশি নেয়া হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব অবৈধ কারবারিদের রুখতে বাজারে বাজারে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তর। করা হচ্ছে জেল জরিমানাও। তবুও যেন দমে যাওয়ার পাত্র নন সিন্ডিকেট হোতারা।
ভারত সরকার নিজের দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আগামী মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। শুক্রবার এমন খবর আসার পর থেকেই এই পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বাড়ার পর শনিবার সকাল থেকে পেঁয়াজের বাজার রীতিমতো অস্থির হয়ে ওঠে। যে যেখানে যা পারছেন সেই অনুযায়ী দাম হাঁকছেন।
রাজধানীর মৌলভীবাজার, লালবাগ, আজিমপুর, পলাশি, হাতিরপুল কাঁচাবাচার, মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একেক বাজারে বিক্রেতারা পেঁয়াজের একেক রকম দাম রাখছেন। বেশির ভাগ বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে মানভেদে ১৬০ থেকে ১৯০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি ও মান এখন ততটা ভালো না হওয়ায় অধিকাংশ ক্রেতাকে আমদানি করা পেঁয়াজ কিনতে দেখে গেছে। চীন থেকে আমদানি করা বড় আকারের পেঁয়াজের দাম পড়েছে ১২০–১৩০ টাকা। দেশের বাজারে পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ এসেছে। এই সুযোগে তার দামও কেজিতে ১০–২০ টাকা বেড়ে ৮০–৯০ টাকায় উঠেছে।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে বিল্লাল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, বুধবার ইন্ডিয়ান পিঁয়াইজ ১২০ টাকা কেজি কিনছি। আজকে সেই পিঁয়াইজ ১৮০ টাকা কেজি। এক কেজিতে যদি ৬০ টাকা দাম বাড়ায় তাইলে যারা হাজার হাজার কেজি বেঁচতাছে তারা কতো কোটি টাকা রাতারাতি লাভ করতাছে এইবার বুঝেন। এইসব ব্যবসায়ীরা জনগণের রক্ত চুইষা খাইতাছে।
খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারি ব্যবসায়ীরা রাতারাতি দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের বেশি দামে কেনার রসিদও দেখান কেউ কেউ। এসব রসিদে দেশি পেঁয়াজের দাম ধরা হয়েছে কেজিপ্রতি ১৭৫–১৯৫ টাকা পর্যন্ত আর আমদানি করা পেঁয়াজে ১৫৫–১৮০ টাকা। এরসঙ্গে নিজের লাভ যোগ করে দাম রাখছেন খুচরা বিক্রেতারা।
রামপুরা বাজারের তামিম এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মাহমুদ হাসান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা প্রতিদিন সকালে শ্যামবাজার থেকে পাইকারিতে মালামাল নিয়ে আসি। এরপর কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করি। শনিবার সকালে পেঁয়াজ আনতে গিয়ে নিজেও রীতিমতো অবাক হয়েছি। দাম এতটা বাড়বে, তা আমার নিজেরও ধারণার বাইরে ছিল। মূলত ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধের এ খবরেই দাম বেড়েছে।
রাজধানীর শ্যামবাজারভিত্তিক একাধিক আমদানিকারক ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজার কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্যবসায়ী পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখে দোকানের বাইরে অবস্থান করছেন। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের হট্টগোল করতেও দেখা গেছে। বিক্রেতাদের কেউ কেউ জানালেন, তারা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। রপ্তানি নীতি সংশোধন করে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।