বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

রাজশাহীর আমের বাজারে ধস

রাজশাহীর আমের বাজারে ধস

আমের জন্য দেশ খ্যাত রাজশাহীতে এবার আমের বাজারে ধস নেমেছে। এবার আমের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু দামে মার খাচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। ভরা মৌসুমে বাজারে আমের ভালো দাম না পেয়ে হতাশ তাঁরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর আমের দাম ছিল এবারের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি। তবে, টানা ছুটি শেষ হওয়ায় আবারও আমের বাজার চাঙ্গা হওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। আমের দাম পড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণের কথা বললেন ব্যবসায়ীরা।

অতিরিক্ত গরমে বিভিন্ন জাতের আম আগেভাগেই পেকে গেছে। ঈদের ছুটিতে ব্যাংক ১০ দিন বন্ধ থাকায় লেনদেন বন্ধ ছিল। ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির পর এখন অনেকের হাতে টাকাপয়সা নেই। তাই বাজার ভরা আম, কিন্তু ক্রেতা নেই। এসব কারণেই এবার আমের দাম পড়ে গেছে।



এ বছর আমের ভরা মৌসুমে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন হওয়ায় আমের দামে প্রভাব পড়ছে। কমে গেছে দাম। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা বাগান মালিকদের নিকট হতে একমন আম ক্রয় করলে অতিরিক্ত পাঁচ কেজি নিচ্ছেন। এতে করে বাগান মালিকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।


রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান আলী বলেন, এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে আগেই আম পেকে গেছে। বেশ কিছু জাতের আম একসঙ্গে পেকে গেছে। বাজারে আমের প্রচুর আমদানি হয়েছে। ঈদের পরে ঢাকার যে ব্যাপারীদের আম কিনতে রাজশাহীতে আসার কথা, তাঁদের অর্ধেকও এখনো আসেননি। ফলে বাজারে আমের আমদানি হয়েছে প্রচুর। কিন্তু কেনার লোক নেই। এ জন্য আমের বাজারে ধস নেমেছে


সরেজমিন রাজশাহীর বাঘা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, লকনা ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, হিমসাগর ১৪০০-১৬০০টাকা, ল্যাংড়া ১২০০-১৩০০ টাকা, ফজলি ৮৫০-১০০০ টাকা এবং আম্রপালি ১৪০০-১৬০০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। বাগান মালিকরা বলছেন, এবার ঈদুল আযহা চলাকালীন সময় লম্বা ছুটি হওয়ার কারণে ঢাকার বাজারে আমের দাম পড়ে গেছে। এ কারণে অত্র অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও ইচ্ছে মত সুযোগ নিচ্ছে।


স্থানীয় আম ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে আমের উৎপাদন খুবই কম থাকায় অনেক বেশি দামে আম কেনা-বেচা হয়েছে। তবে চলতি বছরে আমের উৎপাদন বেশি হওয়া এবং আমের ভরা মৌসুমে ঈদুল আযহা উদ্‌যাপন হওয়ায় আমের দাম পড়ে গেছে।


বাঘার আম বাগান মালিক আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করে বলেন, গত বছর সকল আম বিক্রয় হয়েছে ৪০ কেজি মন হিসাবে। কিন্তু এবার আম ব্যবসায়ীরা একমন আমে ৫ কেজি স্থানীয় ভাষায় (ঢলন) অতিরিক্ত ফ্রি আম নিচ্ছেন। এর ফলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও বাগান মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।


কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, রাজশাহীর ৯টি উপজেলায় ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর আম বাগানের মধ্যে বাঘা উপজেলায় ৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। উপজেলায় উল্লেখযোগ্য আমের মধ্যে- গোপাল ভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া, তোতাপুরি, ফজলি ও আশ্বিনা-সহ হরেক রকম গুটি এবং লক্ষণ ভোগ আম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


বাগান মালিকরা বলছেন, টানা ছুটিতে কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধ থাকায় ঢাকার বাজারে আমের দাম পড়ে গেছে। এ কারণে পাইকারি পর্যায়েও কমেছে দর।


একজন বাগান মালিক বলেন, ‘শহরের অধিকাংশ মানুষই গ্রামে চলে এসেছে। এতে যে যেখানে আম পাঠিয়েছে, বিক্রি হচ্ছে না।’


আম ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতবছর রাজশাহী অঞ্চলে আমের উৎপাদন কম হওয়ায়, দাম ছিল বেশি। এ বছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম নিম্নমুখী। গরমে আম দ্রুত পেকে যাচ্ছে, সেইসাথে ছুটির কারণে পরিবহন বন্ধ ছিল।


তবে বৃষ্টি হওয়ায় আমের বাজার ফের চাঙ্গা হওয়ার আশা কৃষি বিভাগের। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি অফিসার স্মৃতি রানী সরকার বলেন, ‘এখানের আম সারাদেশে ছড়িয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ঈদের জন্য এটা স্থির হয়ে গেছে। আশাকরি খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং স্মুথলি আমটা সারাদেশে চলে যাবে।’


এবার রাজশাহীর ৯ উপজেলায় সাড়ে ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ