❏ফিরলেন না সাদিক-শাম্মী-শামীম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে ছয় দিনে ২৮২ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। শুক্রবার ইসির আইন শাখার কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। এরমধ্যে শুক্রবার ষষ্ঠ ও শেষ দিনে ২২ জন, পঞ্চম দিনে ৪৪ জন, চতুর্থ দিনে ৪৮ জন, তৃতীয় দিনে ৬১ জন, দ্বিতীয় দিনে ৫১ জন এবং প্রথম দিন ৫৬ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন গত ৬ দিন আপিল শুনানিতে এ সিদ্ধান্ত দেন। এ সময় প্রার্থীদের পক্ষে তার আইনজীবীরা ও প্রার্থীরা সশরীরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে দাখিল করা ২ হাজার ৭১২টি মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা বিভিন্ন কারণে ৭৩১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন এবং ১ হাজার ৯৮৫টি গ্রহণ করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৫৬১ জন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করেন। এসব আপিল আবেদন বিষয়ে ১০ ডিসেম্বর থেকে শুনানি শুরু হয়ে শুক্রবার শেষ হয়। রায়ে সন্তুষ্ট না হলে প্রার্থীদের উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এদিকে দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, শাম্মী আহম্মেদ ও শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
তিন প্রার্থীই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও তাদের মধ্যে বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ দলের মনোনয়ন না পেয়ে বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আর শাম্মী আহম্মেদ বরিশাল-৪ ও শামীম হক ফরিদপুর-৩ আসনে পেয়েছিলেন নৌকার মনোনয়ন। শুক্রবার নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত আপিল শুনানিতে এই সিদ্ধান্ত আসে।
সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়ন বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন নৌকার প্রার্থী পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন, আমেরিকার নাগরিকদের ৬ মাস পর পর রিনিউ করতে হয়। গত ৫ বছর তিনি আমেরিকায় যাননি। তার নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা হাই কোর্টে রিট করব। রোব অথবা সোমবারের মধ্যে আপনারা ফলাফল পেয়ে যাবেন।
বরিশাল-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথ পাল্টাপাল্টি আপিল করেছিলেন। শুনানিতে পঙ্কজের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লেও শাম্মী বাদ পড়ে গেলেন দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে।
শাম্মী আহম্মেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সেটি ফিরে পেতে আপিল করেছিলেন তিনি। এছাড়া তথ্য গোপনের অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজের প্রার্থিতা বাতিলেরও আবেদন করেছিলেন তিনি। অন্যদিকে শাম্মীর প্রার্থিতা ঠেকাতে পঙ্কজের আবেদনে বলা হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও তা মনোনয়নপত্রে গোপন করেছিলেন নৌকার প্রার্থী। আপিলে শাম্মীর দুটি আবেদনই নামঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশন; টিকে যায় পঙ্কজের প্রার্থিতা।
ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক একে অপরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে পাল্টাপাল্টি আপিল করেছিলেন ইসিতে।
এই দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধেই দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ ছিল। শামীমের দাবি, আজাদ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আর আজাদের দাবি, শামীমের নাগরিকত্ব আছে নেদারল্যান্ডসে।
শুক্রবার ষষ্ঠ দিনের শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের সামনে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ দিতে পারায় বৈধ হিসেবে এ কে আজাদের প্রার্থিতা টিকে গেলেও শামীম হকেরটা বাতিল করা হয়।
আপিল শুনানিতে দুই পক্ষেরই যুক্তি শোনে কমিশন। শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে কমিশনের সামনে এ কে আজাদের আইনজীবী জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় শামীম হকের দ্বৈত নাগরিকত্ব ছিল। ফলে তিনি নির্বাচনে বৈধ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
অন্যদিকে শামীম হকের আইনজীবী বলেন, তারা নেদারল্যান্ডস দূতাবাসে সেদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের আবেদন করেছেন। তাদের কাছে তথ্য প্রমাণ রয়েছে।
আইনজীবীর ভাষ্য, শামীম হক নাগরিত্ব ত্যাগ করেছেন। কিন্তু আইনের কোথাও নেই যে, এই আবেদনটি গ্রহণ করতে হবে। এরপরই কমিশন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদের আপিলের পক্ষে রায় দেন এবং শামীম হক প্রার্থিতা হারান।
পরে এ কে আজাদের বিরুদ্ধে করা শামীম হকের আপিল শুনানি হয়। শুনানিতে শামীম হকের আইনজীবী এ কে আজাদের আমেরিকার নাগরিকত্বের তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে না পারায় তাদের আপিল নামঞ্জুর করে কমিশন।