❏ টিসিবির জন্য কেনা হবে ৩৯১ কোটি টাকার ডাল-তেল
❏ তেল, চিনি, খেজুরের শুল্ক কমানোর সুপারিশ
❏ মজুতদারদের বিষয়ে অভিযোগ পেলে গ্রেপ্তার: কৃষিমন্ত্রী
আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার ও প্রশাসন। বিশেষ করে মজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। পণ্য মজুদের কোনো অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ম্যানতিতস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রোজা সামনে রেখে ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। এর আগের দিন রোববার অর্থমন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ে পাঁচ মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠক হয়।
অন্যদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ৩৯১ কোটি ১৯ লাখ টাকার রাইস ব্র্যান অয়েল ও মসুর ডাল কিনবে সরকার। এর মধ্যে রাইস ব্র্যান অয়েল এক কোটি ২০ লাখ লিটার ও মসুর ডাল ২০ হাজার মেট্রিক টন। মঙ্গলবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে এই বৈঠক হয়। নতুন সরকারের অধীনে এটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠক।
জানা গেছে, টিসিবি কর্তৃক তিনটি লটে এক কোটি ২০ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান তেল সরাসরি ক্রয় (ডিপিএম) পদ্ধতিতে ক্রয়ের জন্য স্থানীয় তিনটি প্রতিষ্ঠান মজুমদার প্রোডাক্ট, মজুমদার ব্র্যান অয়েল মিলস ও আলী ন্যাচারাল অয়েল মিলস অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে দর প্রস্তাব চাওয়া হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান তিনটি দর প্রস্তাব দাখিল করে। টিইসি কর্তৃক দর প্রস্তাব তিনটি পরীক্ষান্তে রেসপনসিভ হয়। দর প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশ করা মজুমদার প্রোডাক্ট, মজুমদার ব্র্যান অয়েল মিলস ও আলী ন্যাচারাল অয়েল মিলস অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে এক কোটি ২০ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান তেল ১৮৯ কোটি ৬০ লাখ টাকায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে। সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৮ কোটি ৮০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ১৫ কোটি ৪৫ লাখ লিটার কেনা হয়েছে। এদিকে ভারতের উমা এক্সপো প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ডাল কিনতে ৯৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে। প্রতিকেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ১০১ টাকা ১৩ পয়সা।
এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়ার রয় অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস ও ঢাকার নাবিল নবা ফুডস লিমিটেড থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এ ডাল কিনতে খরচ হবে ১০৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। প্রতিকেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ১০৫ টাকা ৪৫ পয়সা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে দুই লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কিনবে সরকার। এর ১ কোটি ৫২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কেনা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগের যুগ্মসচিব মো. আবদুছ সামাদ আল আজাদ মঙ্গলবার বলেন, রোজা সামনে রেখে ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের শুল্ক কমাতে আমরা এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি। তবে কোন পণ্যে কতটা কমাতে হবে বা কমানো হবে সেটা এনবিআর জানিয়ে দেবে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এখন প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ন্যূনতম দেড়শ টাকায়, যা দুই বছর আগে ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকায় কিনেছেন ভোক্তারা। সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১৭০ টাকায়; যা দুই বছর আগে ১০০ টাকারও কম দামে কেনা যেত। ছোলার দামও গতবছরের তুলনায় কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে। রোজার মাস না আসতেই এক কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আর রোজার মাসের খাদ্য তালিকার অন্যতম অনুসঙ্গ খেজুরের আমদানি শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আমদানি বন্ধ রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক মাস ধরে শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বর্তমানে বাজার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়েছে কি না- জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘মজুতদারি কিছুটা ছিল, সেটা নেই, তা বলা যাবে না। তবে আমরা এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে শক্ত ভূমিকা নিয়েছি। এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে দিয়েছেন, যারা এটা করবে, তাদের গ্রেফতার করো। জানিয়ে দাও, এ বিষয়ে আমাদের কোনো ছাড় নেই।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেটা আমরা দেখব। আরেকটা জিনিস হলো, চালের দাম বাড়লে তাতে মানুষের ওপর চাপ পড়ে। এ বিষয়ে আমরা সজাগ আছি। আমরা বলেছি, এ বিষয়ে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে যতটুকু সহযোগিতা দরকার, সেটা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব, যাতে দাম বেড়ে না যায়, কৃষকেরাও যাতে দাম পায়, আবার মজুতদারিও যাতে না হয়। সিন্ডিকেট যাতে না হয়, সেগুলো ভাঙা হবে। ভাঙার পদ্ধতি আমাদের জানা আছে। দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয়ার সুযোগ নেই। নিজেও আমি দুর্নীতির পক্ষে না। আমি রাজনীতি করি, সাংবাদিকরা আমাকে সবাই চেনেন। আমার কোনো দুর্নীতি নেই।’
সার সংকট নিয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে তথ্যচিত্র আছে। ইউরিয়ার চাহিদা হলো ২৭ লাখ মেট্রিক টন। নিরাপত্তা মজুত ছয় লাখ মেট্রিক টন। চাহিদা ৩৩ লাখ। আমাদের হাতে যে সার আছে, তাতে কোনো সংকট নেই।’
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু। স্বাধীনতার সময় থেকে তারা আমাদের বন্ধু আছে। আগামীতেও থাকবেন। ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত এসেছেন সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে। তারপরে আমরা সার নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদের কাছ থেকে সার আনছি।’
আব্দুস শহীদ বলেন, রাশিয়ায়ও আমরা পেঁয়াজ, ফুলকপি ও আলু রপ্তানি করব। যদি মান নিয়ন্ত্রণে কোনো সমস্যা না হয়, আমরা তো অবশ্যই পরীক্ষা করব, পরীক্ষা করে সেগুলো রপ্তানি করব। এটা আমাদের জন্য ভালো খবর। আমের বিষয়টি তারা বারবার বলছিলেন। তারা আগেও আম খেয়েছেন। পোকা-মাকড় না থাকলে তারা আম নেবে আমাদের দেশ থেকে।