অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা জাতি হিসেবে ব্যর্থ হতে চাই না। আমাদের তরুণরা জেগেছে, আমাদের মানুষ জেগেছে। আমরা নতুন বাংলাদেশের কথা বলছি। সেটাই নিশ্চিত করতে চাই। তা না হলে এত রক্তপাতের, এত আত্মত্যাগের কি ফল পেলাম? আমাদের ছেলেমেয়েরা ২৪ জুলাই যে অসাধ্য সাধন করেছে, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ করা। এখানে সব নাগরিক সমান সুযোগ পাবে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা সে যে ঘরেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন। সে ছেলে হোক আর মেয়ে হোক। সবাই নাগরিকের সমান সুবিধা পাবে। পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার শক্তি তাদের আছে। তারা কেউ বন্দি থাকার জন্য জন্মগ্রহণ করেনি। কারো ভয়ে পালিয়ে থাকার জন্য জন্মগ্রহণ করেনি। আমরা তাদেরকে সেই সুযোগ দিতে চাই। তারা নিজের মত করে গড়ে উঠবে। দেশকে গড়ে তুলবে। পৃথিবীকে গড়ে তুলবে।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা এমন রাষ্ট্র গঠন করতে চাই, পৃথিবী আমাদেরকে অনুসরণ করবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা বৈষম্য, দুর্নীতিমুক্ত একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ার যে অগ্রযাত্রা শুরু করেছি, তার সব বাস্তবায়ন করতে হলে ধর্ম, বর্ণ, ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সব অশুভ, অন্যায়, অন্ধকারকে পরাজিত করে ঐক্য সম্প্রীতির জয় হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথে।
‘আমরা ঐক্যের কথা বলি। যে ঐক্যের কথা আমরা বলি সেই ঐক্য দুর্গাপূজার কাঠামোর মধ্যেই আছে। লক্ষ্মীর ধনসম্পদ, সরস্বতীর জ্ঞান কার্তিকের বীরত্ব গণেশের সাফল্য দশভূজা দুর্গার অসীম শক্তি সম্মিলিতভাবে সমস্ত অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে। এর মধ্যেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চিত্র আছে। জ্ঞান নিয়ে, সম্পদ নিয়ে, শক্তি নিয়ে সবাই যার যার শক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হলে আমরা সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে পারব। এর থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করে কারো সাধ্য নেই। নিজেরা বিভক্ত হয়ে গেলে, ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে আমরা জাতি হিসেবে ব্যর্থ হয়ে গেলাম।’
নিরাপত্তা বাহিনীর বেষ্টনীর মধ্যে আমাদের ধর্ম পালন করতে চাই না জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমরা নাগরিক হিসেবে মুক্তভাবে, যার যার ধর্ম পালন করতে চাই। এই অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা পালন করার জন্য তাদের সবার প্রতি ধন্যবাদ জানাই।
নিরাপত্তা বাহিনীর বেষ্টনীর হয়ে ধর্ম পালন করাটা হাস্যকর জিনিস হয়। এটা কি কথা হলো, এটা কোন দেশ, কোন ধরনের দেশ আমরা বানালাম। এরকম দেশ বানানোর জন্যই এত রক্তপাত, এত কিছু হল, আমরা সেটা চাই না। আমরা সম্পূর্ণ নিরাপত্তার মধ্যে, সম্পূর্ণ বিশ্বাসের মধ্যে, আমরা আমাদের যার যার মত, যার যার ধর্ম পালন করতে চাই। এই নিশ্চয়তা চাই।