রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁসের মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। দুর্নীতির আরেকটি মামলায় সাজা পেয়ে যিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনে করা কূটনৈতিক তারবার্তা (সাইফার) ফাঁসের মামলায় পাকিস্তানের একটি বিশেষ আদালত মঙ্গলবার ইমরানকে এ সাজা দেন বলে জানায় বিবিসি।
গত বছর অগাস্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। মামলার আরেক আসামী ইমরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ মাহমুদ কুরেশিকেও এদিন ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। এই মামলার বিচার কাজ পরিচালনার জন্য রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বিশেষ আদালত বসানো হয়েছিল। ইমরান এবং কুরেশি ওই কারাগারেই বন্দি আছেন।
পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ২০২২ সালে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন ইমরান খান। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়েছে। তারমধ্যে তোষাখানা মামলায় গত বছর তাকে দোষীসাব্যস্ত করে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় পাকিস্তানের একটি আদালত।
ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, তার বিরুদ্ধে হওয়া সব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ প্রণোদিত।
পাকিস্তানে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কারাদণ্ডিত হওয়ার কারণে ইমরান এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। যদিও ইমরানের পক্ষ থেকে তার দলের নেতারা তার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি সরকারি কোনো পদ গ্রহণ করতে পারবেন না। এই অজুহাত দেখিয়ে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ইমরান খানের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়।
এদিকে, মঙ্গলবার রায় দেওয়া মামলার বিবরণীতে বলা হয়, অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার এক মাস আগে ২০২২ সালের মার্চে একটি মিছিল-সমাবেশে ইমরান খান মঞ্চে উঠে একটি কাগজ দেখিয়ে বলেছিলেন, তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে বিদেশি চক্রান্তের প্রমাণ তার হাতে রয়েছে।
তিনি দাবি করেছিলেন, বিদেশিরা বলেছেন, যদি পকিস্তানের ক্ষমতা থেকে ইমরান খানকে সরিয়ে দেয়া হয় তবে সব কিছু ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
ইমরান চক্রান্তকারী হিসেবে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। তবে তিনি সে সময় বার বার যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করে গেছেন। মামলায় রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যকলাপ একটি শ্রেণীবদ্ধ নথি ফাঁস এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষতি করার সামিল।
পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। গত ডিসেম্বরে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ইমরান ও কুরেশির বিরুদ্ধে বিশেষ আদালতে চলা এই মামলার বিচারকাজের ওপর ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। আদেশে বিচারপতি মিয়াঙ্গুল হাসান আওরঙ্গজেব বলেছিলেন, মামলাটিতে ‘আইনি ত্রুটি’ রয়েছে।