মানুষের জীবন সুখ-দুঃখের মিশ্রণে গঠিত। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে কখনো সুখ দিয়ে, কখনো দুঃখ দিয়ে পরীক্ষা করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘আর আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দিয়ে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সুরা আম্বিয়া: ৩৫)
বিপদের সময়ে মুমিন কীভাবে আচরণ করবে, তা কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো।
বিপদে মুমিনের করণীয়
১. যথাসাধ্য চেষ্টা ও উপায় অবলম্বন: বিপদ থেকে মুক্তি পেতে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘তুমি তোমার উট বেঁধে রাখো, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করো।’ (তিরমিজি: ২৫১৭)
২. দোয়া ও আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা: বিপদে অধিক পরিমাণে দোয়া করা মুমিনের শান। আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’ (সুরা মুমিন: ৬০) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘দোয়া ইবাদতের মূল।’ (তিরমিজি: ৩৩৭২)
৩. সবর বা ধৈর্য ধারণ: বিপদে মুমিনের প্রধান করণীয় হলো ধৈর্য ধারণ। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫)
৪. তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা: আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা ঈমানের অঙ্গ। কোরআনে বলা হয়েছে- ‘যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট হন।’ (সুরা তালাক: ৩)
৫. শুকরিয়া আদায়: বিপদেও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)
৬. ইস্তিগফার ও তাওবা: বিপদ-মুসিবত গুনাহ মোচনের উপায়। রাসুল (স.) বলেছেন- ‘মুসলমানের ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ আসে, এসবের বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি: ৫৬৪১)
৭. আল্লাহর হিকমত অনুসন্ধান: প্রত্যেক বিপদের পেছনেই রয়েছে আল্লাহর অগাধ হিকমত। কোরআনে এসেছে- ‘হতে পারে, তুমি একটি জিনিস অপছন্দ করো, অথচ তা তোমার জন্য ভালো।’ (সুরা বাকারা: ২১৬)
বিপদের ফজিলত
বিপদ শুধু পরীক্ষা নয়, বরং মুমিনের জন্য বিশেষ নেয়ামতও বটে। হাদিসে এসেছে- ‘কেয়ামতের দিন বিপদগ্রস্ত লোকদের প্রতিদান দেখে অন্যরা আফসোস করবে।’ (তিরমিজি: ২৪০২)
বিপদ মানুষের জীবনে অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু একজন মুমিন এসব পরিস্থিতিকে আল্লাহর পরীক্ষা মনে করে ধৈর্য, দোয়া, শুকরিয়া ও তাওবার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রতিটি পরীক্ষায় সফল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।