বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুকজুড়ে শোকের ছায়া

ফেসবুকজুড়ে শোকের ছায়া

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সামাজিক মাধ্যমে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এরপরই আসে একে একে শোকের বার্তা। শোকের মাতমে সবাই তাকে ‘আপসহীন নেত্রী’ উল্লেখ করছেন। তার দীর্ঘ সংগ্রামের পথ এবং  আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরছেন অনেকেই।

ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান লিখেছেন, একজন নারী হিসেবে এই দীর্ঘ কঠিন পথ পাড়ি দিতে উনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, সেটা সবার অজানাই রয়ে গেল! ওনার দৃঢ়তাকে সম্মান জানাই। ভালো থাকবেন, বেগম খালেদা জিয়া!


ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ খালেদা জিয়া, আজ সকালে মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, তার আত্মার শান্তি কামনা করি।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফাহাম আব্দুস সালাম লেখেন, তিনি ভালোবেসেছিলেন এই দেশ আর তার মানুষদের। সবচেয়ে সংকটময় কালেও তিনি তার স্বভাব থেকে বিচ্যুত হন নাই। বাংলাদেশে তার চেয়ে বড় কোনো রাজনীতিবিদ জন্মায় নাই। বাংলাদেশে তার মতো একজন মানুষ আমি আর দেখি নাই। খালেদা, আমাদের লোক ছিলেন।

সাংবাদিক সিয়াম সারওয়ার জামিল লেখেন, আমি যখন স্কুলে পড়ি, ২০০১ থেকে ২০০৬– তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। সেই সময়টা ছিল আমার শৈশব-কৈশোরের স্মৃতির অংশ। টিভির পর্দায়, পত্রিকার পাতায়, রাজনৈতিক আলোচনায়— একটি নাম তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল। রাজনীতি কোনও সহজ বিষয় না। রাজনীতি মানে শুধু ক্ষমতা নয়— এটা ত্যাগ, ধৈর্য, সংঘর্ষ আর দীর্ঘ লড়াইয়ের নাম। একজন গৃহবধূ থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে উঠে এসে দেশের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়া-এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, তাকে ঘিরে বিতর্ক ছিল, মতভেদ ছিল, সমালোচনাও ছিল— কিন্তু ইতিহাসে তার অবস্থান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমরা যারা তাকে ক্ষমতায় দেখেছি, খবরের কাগজে পড়েছি, রাজনৈতিক বাস্তবতার অংশ হিসেবে জেনেছি— আজ আমাদের জন্য এটা শুধু একজন ব্যক্তির মৃত্যু নয়, একটা সময়ের অবসান। বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি রইল শ্রদ্ধা। ইতিহাস তার জায়গা নিজেই ঠিক করে নেবে।


সাংবাদিক আব্দুন নুর তুষার লিখেছেন, নিশ্চিতরূপে আমরা সকলেই আমাদের প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন করবো। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা লিখেন, রাজনীতিবিদদের সম্মান করতে পারলে দেশটা অনেক এগিয়ে যেত। মনে আছে আমাদের বড় হওয়ার কালে এরশাদকে নিয়ে কত হাসি ঠাট্টা চলতো। কিন্তু ৯০ এর গন অভ্যুত্থানের পর নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আসা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমি বাংলা একাডেমিতে এলে দর্শক সারিতে বসা থাকলেও উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান করেছিলাম! জনগণ যাকে নির্বাচিত করেছে, তাকে সম্মান তো দিতেই হয়! সকল সময় একইরকম সম্মান আসেনি মনে, কিন্তু ১/১১ এর পর থেকে ধীরে ধীরে তার প্রতি সম্মান কেবল বেড়েছে, হাসিনাকে এরেস্টের সময়, তার প্রতি হওয়া আচরণ নিয়ে খালেদা জিয়া প্রতিবাদ করেছিলেন, এরপর নিজেও এরেস্ট হন।


তিনি আরও উল্লেখ করেন,  রাজনীতির পর্দার আড়ালে কি চলে, আমজনতা আমরা সবসময় বুঝি না। ফিরে দেখে আমরা ঠিকই ২০১৪-১৫ থেকে স্পষ্ট বুঝতে থাকি খালেদা জিয়া ও তার দলের সাথে কি অন্যায়টা চলছে। রাজনীতিকরা এভাবে সময় কিনে চলে, ক্ষণস্থায়ী ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে, ২০০৬ এর স্মৃতির কারণেও তার ও তার দলের প্রতি সহানুভূতি আসতে দেরি হয়েছিল। জীবন সায়াহ্নে তিনি সকলের মতো আমারও শ্রদ্ধার মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। দলমত নির্বিশেষে এই সম্মান অর্জন একজন রাজনীতিবিদের জন্য আসামান্য, বেগম খালেদা জিয়া সেই অসামান্য রাজনীতিকই হলেন, তার বিদায় জাতির জন্য বিরাট ক্ষতি, একটাই সান্তনা তিনি গণভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনমানুষের বিজয় দেখে গেলেন। রেস্ট ইন পাওয়ার নেত্রী!


উন্নয়ন কর্মী আমিনুল সজল লিখেছেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। শোকসন্তপ্ত পরিবার, তার দল, সমর্থক এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহ এই শোক বইবার শক্তি দিন। তার দল ও সমর্থক কর্মীরা তাকে গণতন্ত্রের মা বলেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি অনেক অবদান রেখেছেন। একটা সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য সবচেয়ে বড় কাজ।


গবেষক এবং লেখক আলতাফ পারভেজ লিখেছেন, শারীরিকভাবে বিদায় নিলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্র হিসেবে, বিশেষ করে জেনারেল এরশাদের আমলে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে তার লড়াকু ভূমিকার জন্য খালেদা জিয়া স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, শ্রদ্ধা।


প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দুত লুতফে সিদ্দিকী লিখেছেন, তার আগ পর্যন্ত তার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। এটি আমার বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধার চিহ্ন ছিল যে, তিনি সেই সময়ে একজন কর্মরত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।  আমাদের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে, সেট-পিস ফটোগুলি ছাড়াও, আমরা বেশিরভাগ রাতের খাবারের জন্য একা ছিলাম এবং কথোপকথনটি অনায়াস মনে হয়েছিল।


তিনি উল্লেখ করেন, আমি প্রথমবারের মতো জানতে পেরেছি যে ‘‘নারকেল বড়ই’’ সেই ফলের অন্য নাম। চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা সম্পর্কে তিনি কথা বলার কথাও আমার মনে আছে।


তিনি লিখেছেন, আমি মাঝে মাঝে ভাবতাম যে এভাবে বিধবা হওয়া, আপনার ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে, সামনে থেকে (এবং সম্পূর্ণরূপে দেশের ভেতর থেকে) প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেওয়া এবং এক দশকের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হওয়া কেমন হতে পারে। আজ আরও সাড়ে তিন দশকের নেতৃত্বের যাত্রার পর তাঁর ব্যক্তিগত দৃঢ়তার জন্য তিনি যে সর্বজনীন শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন তা অসাধারণ।  

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ