বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

কোরআনে যেসব অপরাধকে জুলুম বলা হয়েছে

কোরআনে যেসব অপরাধকে জুলুম বলা হয়েছে

জুলুম ইসলামে একটি গুরুতর অপরাধ, যা মানুষের ইহকাল ও পরকাল উভয়ই ধ্বংস করে দেয়। কোরআন মাজিদে বিভিন্ন প্রকার জুলুমের বিবরণ ও তার ভয়াবহ পরিণতির কথা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

জুলুমের সংজ্ঞা ও ভয়াবহতা

জুলুম আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ হলো অবিচার, অত্যাচার, অন্যায় বা সীমালঙ্ঘন করা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, জুলুম হলো আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করা, নিজের বা অন্যের প্রতি অন্যায় আচরণ করা কিংবা কারও অধিকার নষ্ট করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘কেউ আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করলে, সে তো তার নিজের উপরই জুলুম করল।’ (সুরা তালাক: ১)


এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, জুলুম কেবল অন্যের প্রতি নয়; বরং আল্লাহর নির্ধারিত বিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে মানুষ নিজের সত্তার প্রতিও জুলুম করে। জুলুমের ভয়াবহতা এতটাই গুরুতর যে, কোরআন ও হাদিসে একে সবচেয়ে নিকৃষ্ট আচরণ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।


কোরআনে বর্ণিত জুলুমের প্রধান রূপসমূহ

১. শিরক: সর্বাধিক গুরুতর জুলুম

লোকমান (আ.) তার সন্তানকে উপদেশ দিয়েছিলেন- ‘বাছা! আল্লাহর সাথে শিরক করো না। নিশ্চয়ই শিরক অনেক বড় জুলুম।’ (সুরা লুকমান: ১৩)

মুসা (আ.) তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন- ‘হে আমার সম্প্রদায়! বাছুরকে উপাস্য বানিয়ে প্রকৃতপক্ষে তোমরা নিজেরা নিজেদের প্রতিই জুলুম করেছ।’ (সুরা বাকারা: ৫৪)

২. গুনাহ ও পাপাচার

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’ (সুরা নিসা: ১১০)


৩. শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন

‘এটা আল্লাহর স্থিরীকৃত সীমা। সুতরাং তোমরা এসব লঙ্ঘন করো না। যারা আল্লাহর সীমা অতিক্রম করে তারা বড়ই জালিম।’ (সুরা বাকারা: ২২৯)

৪. শরিয়ত-বিমুখতা

‘সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বড় জালেম আর কে হতে পারে, যাকে তার প্রতিপালকের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেওয়া হলে সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়?’ (সুরা কাহাফ: ৫৭)

৫. আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলা

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তার চেয়ে বড় জালিম কে ?’ (সুরা ইউনুস: ১৭)

৬. অন্যকে কষ্ট দেওয়া

‘যারা নির্যাতিত হওয়ার পর আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হিজরত করেছে নিশ্চিতভাবে আমি দুনিয়ায়ও তাদেরকে উত্তম নিবাস দান করব।’ (সুরা নহল: ৪১)


৭. অন্যের হক নষ্ট করা

‘যারা নিজেদের উপর জুলুম হওয়ার পর বদলা নেয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ তো তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের উপর জুলুম করে।’ (সুরা শুরা: ৪১-৪২)

৮. দ্বীনি কাজে বাধা দেওয়া

‘সেই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে আল্লাহর নাম নিতে বাধা প্রদান করে?’ (সুরা বাকারা: ১১৪)

হাদিসে জুলুমের ভয়াবহতা

রাসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন- ‘তোমরা জুলুম থেকে বেঁচে থাকো! কেননা জুলুম কেয়ামতের দিন বহু অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।’ (সহিহ বুখারি: ২৪৪৭)

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘হে আমার বান্দারা! আমি জুলুম করাকে নিজের প্রতি হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করে দিয়েছি। সুতরাং একে-অন্যের প্রতি জুলুম করো না।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৭৭)

কোরআন ও হাদিসে জুলুমকে সবচেয়ে ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। প্রতিটি মুসলিমের উচিত সব ধরনের জুলুম থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহর সীমারেখা মেনে চলা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল প্রকার জুলুম থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমি।


সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ