যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে, এমন খবরে ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার ফিলিস্তিনিরা ও ইসরায়েলে জিম্মিদের পরিবারগুলো তীব্র আনন্দে উদযাপন করেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) গাজার তরুণরা ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাস্তাগুলোতে নেমে শ্লোগান দিয়ে, নেচে খবরটি উদযাপন করেছে। এমনকী ছিটমহলটির কিছু অংশ ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকলেও তারা দমে যায়নি। এই গাজায় টানা দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি বোমা হামলায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দার প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনুসে আনন্দরত আব্দুল মজিদ আব্দ রাব্বো রয়টার্সকে বলেন, “এই যুদ্ধবিরতি জন্য, রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ। শুধু আমিই খুশি না, পুরো গাজা ভূখণ্ড খুশী। এই রক্তপাত বন্ধ হয়ে যুদ্ধবিরতি হওয়ায় সব আরব জনগণ, পুরো বিশ্ব খুশি। আমাদের পক্ষে যারা দাঁড়িয়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ ও ভালোবাসা।”
ইসরায়েলের তেল আবিবে তথাকথিত জিম্মি চত্বরে গাজায় হামাসের হাতে বন্দি এক জিম্মির মা আইনভ জাঙ্গাউকার অত্যন্ত আনন্দিত ছিলেন।রয়টার্সইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির ঘোষণা আসার পর গাজার খান ইউনিসে ফিলিস্তিনিদের উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত
উদযাপনের লাল অগ্নিশিখার আলোতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “আমি দম নিতে পারছি না, আমি দম নিতে পারছি না, আমি কী অনুভব করছি ব্যাখ্যা করতে পারবো না, এতো আনন্দ হচ্ছে।”
নিজের জিম্মি ছেলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ওকে আমি কী বলবো? আমি কী করবো? জড়িয়ে ধরবো আর চুমু খাবো। শুধু বলবো আমি ওকে ভালোবাসি, এটাই। আর তার চোখ আমার চোখে ডুবে যাওয়া দেখবো, এটা অসাধারণ, এটাই স্বস্তি।”
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় শান্তি আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম পর্ব নিয়ে বুধবার ইসরায়েল ও হামাস সমঝোতা চুক্তি করেছে। পরিকল্পনার এই পর্বে যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের কথা রয়েছে। এটি ঠিকঠাকমতো বাস্তবায়িত হলে গাজায় দুই বছর ধরে চলা প্রাণঘাতী যুদ্ধ অবসানের পথ খুলতে পারে।
এই মুহূর্তে কেমন অনুভব করছেন, রয়টার্সের এমন প্রশ্নে সাবেক জিম্মি ওমের শেমটোভ বলেন, “এটি বর্ণনার ভাষা নেই।”
গাজার সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে ইসরায়েলের শুরু করা ধ্বংসাত্মক হামলার দুই বছর পূর্তির মাত্র একদিন পর মিশরে দুই পক্ষের পরোক্ষ আলোচনায় এই অগ্রগতি হয়েছে।
গাজায় তরুণদের একটি দল এ খবরে আন্দন উদযাপন করছিল। এক বন্ধুর কাঁধে চড়া এক তরুণ শ্লোগান দিচ্ছিল আর বাকিরা তাকে ঘিরে হাততালি দিচ্ছিল।
ছিটমহলটির লোকজন আনন্দে কাঁদছিল আর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে শ্লোগান দিচ্ছিল। ‘আল্লাহ মহান,” বলেছিল তারা। এই চুক্তি যুদ্ধ শেষ করবে আর তাদের বাড়িতে ফেরার সুযোগ করে দেবে বলে তারা আশা প্রকাশ করছিল।
গাজা সিটি থেকে বাস্তুচ্যুত ব্যবসায়ী তামের আল-বুরারি বলেন, “আমি হাসি আর কান্না থামাতে পারছি না। আমরা বেঁচে গেছি, এটা বিশ্বাস করতে পারছি না।”
রয়টার্সকে এক কথোপকথন অ্যাপের মাধ্যমে তিনি বলেন, “আমাদের বাড়িতে ফিরে যেতে আর অপেক্ষা করতে পারছি না, সেগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও। গাজা সিটিতে ফিরতে চাই, বোমার আতঙ্ক ছাড়াই ঘুমাতে চাই, আমাদের জীবন পুনর্নির্মাণ করতে চাই।”
হামাস শাসিত গাজা সরকারের গণমাধ্যম দপ্তর আনুষ্ঠানিভাবে চুক্তিটির বিস্তারিত খুঁটিনাটি প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত লোকজনকে নিজ নিজ এলাকায় না ফেরার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। জনগণকে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলো থেকে দূরে থাকতে বলেছে তারা।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীও গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরে না আসার জন্য সতর্ক করেছে। সামাজিক মাধ্যম এক্স এ বাহিনীটি বলেছে, “এলাকাগুলো এখনও বিপজ্জনক যুদ্ধ অঞ্চল হয়ে আছে।”