আসন্ন রমজানে মরিচ, আলু, শসা, বেগুনসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য যেন স্বাভাবিক থাকে এবং কোনো অসাধু ব্যক্তি যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে এই খাতের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মাহবুবুল আলম। রোববার সকালে এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডিং কমিটি অন কাঁচামাল আড়তদার, মার্কেটিং অ্যান্ড সাপ্লায়ার্সের সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। একই ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, রমজান মাস পবিত্র মাস। এ মাসকে কেন্দ্র করে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সবজি যেমন বেগুন, মরিচ, আলু, শসা ইত্যাদির সরবরাহ ও মূল্য যেন স্বাভাবিক থাকে, এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলে কেউ যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য এই খাতের ব্যবসায়ীদের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এ সব পণ্যের পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে এই খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, দেশে প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থার উন্নয়নে সঠিক পরিসংখ্যান ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা জরুরি। এছাড়া পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে পথেঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধের কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, রোজদারদের স্বস্তি দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দু-একদিনের মধ্যে জিহাদি খেজুরের দাম নির্ধারণ করবে। রোববার রমজান উপলক্ষে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে একটি গ্রুপের সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জিহাদি খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দেবে, পাশাপাশি আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নজরদারির মধ্যে রাখা হবে অন্যান্য খেজুরও। ভোক্তার ডিজি বলেন, ভোক্তা অধিকার বছরব্যাপী অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাজার নিয়ন্ত্রণে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে ভোক্তা অধিকার। অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে বাজার নিয়ন্ত্রণের এ চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। তিনি বলেন, এবারের রমজানে গ্রুপটি প্রায় ৩০টি পণ্যে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বিক্রি করছে। ক্রেতাদের অস্বস্তি কমাতে দেশের অন্যান্য শিল্প গ্রুপ গুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানিয়েছেন, রমজানে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে দাম বেঁধে দেয়া হবে। রোববার সচিবালয়ে এক সই অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে কৃষিপণ্য সরবরাহে নিযুক্ত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এবং রাশিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয় ‘প্রোডিনটর্গ’ এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউএইতে (সংযুক্ত আরব আমিরাত) দেখলাম, ১৮টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের রাষ্ট্রীয় সার্কুলার দিয়ে দিয়েছে, এই পণ্যগুলোর দাম কেউ এ মাসে (রমজান) বাড়াতে পারবে না। আমরা এবার হয়তো পারি নাই। ইনশাআল্লাহ আমাদের সাপ্লাই চেইন ইম্প্রুভ করে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ ইম্প্রুভ করে কেবিনেটের অনুমোদন নিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের একটা কমপ্লিটলিস্ট তৈরি করব। ওইভাবে এটার সাপ্লাই বাড়ানো এবং পণ্যের নির্ধারিত দাম আমরা যাতে ঠিক করতে পারি।
এদিকে রোজা এলেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে কিছু ব্যবসায়ী পরিবার নিয়ে সৌদি আরব চলে যায় বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূন।
তার ভাষ্যে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রমজান এলে ব্যবসায়ীরা মানুষকে সাহায্য করে, বড় বড় ব্যবসায়ীরা মানুষকে দান করে। ক্রিসমাসের মত (উৎসবে) সব পণ্যের দাম কমে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে হচ্ছে এর উল্টো। আমাদের দেশে আমরা এই ট্রেন্ড দেখছি না ব্যবসায়ীদের মাঝে… । অনেক বড় ব্যবসায়ী আছেন, তারা চান- যত বেশি লাভ করা যায়। এমন ব্যবসায়ীও আছে, দামটাম বাড়াইয়া সৌদি আরব গিয়া বইসা থাকে। ঈদের সময় তাদের পাওয়া যায় না, ফ্যামিলি নিয়া ওইখানেই থাকে।
রোজায় নিত্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইয়ের নেওয়া বিশেষ কার্যক্রম সম্পর্কে তুলে ধরতে রোববার তেজগাঁওয়ে সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন নূরুল মজিদ হুমায়ূন।
তিনি বলেন, খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স। কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার সুযোগ নাই। আমরা যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব। আমরা ব্যবসায়ী ফ্রেন্ডলি, কিন্তু যারা এখানে অন্য ধরনের গেইম খেলতে চায়, প্রতারণা করতে চায় এবং যারা ভেজাল করতে চায়- তাদের ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। রোজার মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে গত ৪ মার্চ শিল্পমন্ত্রী বলেছিলেন, অভাব-অভিযোগ তো আছেই। আমরা সবকিছুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ না। বাইরে থেকে অনেক জিনিস আমদানি করতে হয়। সেগুলো আপনাদেরকে বুঝতে হবে। বরই দিয়ে ইফতার করেন না কেন? আঙ্গুর লাগবে কেন, আপেল লাগবে কেন? আমাদের দেশে আর কিছু নাই? পেয়ারা দেন না, প্লেটটা ওইভাবে সাজান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন যে, ইফতার পার্টি দরকার নেই। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। আপনার সংসার যেমন আপনি দেখেন, আপানারা সাংবাদিকরা দেশটারেও এভাবে দেখেন। খালি আকাশ থেকে দেইখেন না। নিচের থেকে আশপাশে দেখেন।
এ বক্তব্যের বিষয়ে রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নে নূরুল মজিদ হুমায়ূন বলেন, বিষয়টির ভিন্ন ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমি আগেও বলেছি, মিসইন্টারপ্রেট করা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। আমি বিস্তারিত বলেছি… এবং অনেকের অনেক জায়গায় জ্বালা আছে। সেই জ্বালা থেকে তারা হয়তো ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। ওই কষ্ট তো আমরা লাঘব করতে পারব না। জনগণই বিচার করবে, আমরা কোনো উত্তর দিতে চাচ্ছি না। তারা পাগল হয়ে গেছে। আমি খেজুরের পরিবর্তে বলিনি- মাইন্ড ইট; আমি বলেছি খেজুরের সঙ্গে, খেজুরের সাথে …. ইফতারের প্লেটটা আমাদের দেশীয় ফল দিয়ে সাজান।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, খেজুর দিয়ে ইফতার করা একটা ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়। আমাদের লোকজন খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করে। সরকার খেজুরের শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। শিল্পমন্ত্রীর সেদিনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এর পরদিন ক্ষোভ ঝাড়েন জাসদের সভাপতি হাসানুল ইনু।