❏ সর্বোচ্চ পর্যায়ের আশ্বাসের পরও কমছেনা নিত্যপণ্যের দাম: সভা সমাবেশেই কাজ শেষ
শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মাস বিশ্ব মুসলিমের কাছে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস। রমজান বা রোজায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে দেয়া হয়, তখন আমাদের দেশে এর উল্টো দেখা যায়। সারা বছর যে দামে পণ্য বিক্রি হয় রমজানে ক্ষেত্র বিশেষে তা দাম তিন থেকে চারগুন পর্যন্ত বেড়ে যায়। এমনিতে মূল্যস্ফীতির যাতাকলে পড়ে সাধারণ মানুষের নাজেহাল অবস্থা, তারমধ্যে রমজান টার্গের্ট করে এই মূল্যবৃদ্ধিই যেন এখন মানুষের কাছে রমজানের বড় আতংক হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকার পরেও অসাধু ব্যবসায়ীরা থোরাই কেয়ার করছেন। নিত্যপণ্যের দাম কমানোর হাম্বিতাম্বি মূলত সভা সমাবেশেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
মূলত একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সারা বছর মুখিয়ে থাকেন রমজান মাসের জন্য। কবে আসবে রমজন মাস। এ মাসে সারা বছরের ব্যবসা একসাথে করার টার্গেন নিয়ে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নামেন তারা। এরফলে ভোগ্যপণ্য, জামাকাপড়সহ বিভিন্ন পণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, রসুন, খেজুর, ময়দা, ছোলা, চিনি ইত্যাদির বাজার সবসময় গরম থাকে।
যদিও রমজান ও ঈদ সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যানজট, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে সচিবদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠকে রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, মূল্য পরিস্থিতিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
এদিকে রমজানে মরিচ, আলু, শসা, বেগুনসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য যেন স্বাভাবিক থাকে এবং কোনো অসাধু ব্যক্তি যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে এই খাতের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মাহবুবুল আলম।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, রমজান মাস পবিত্র মাস। এ মাসকে কেন্দ্র করে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সবজি যেমন বেগুন, মরিচ, আলু, শসা ইত্যাদির সরবরাহ ও মূল্য যেন স্বাভাবিক থাকে, এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলে কেউ যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য এই খাতের ব্যবসায়ীদের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
পবিত্র রমজান মাসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পায়তারাকারীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা ৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, রমজান মাসে মানুষ যাতে ন্যায্য মূল্যে পণ্য সামগ্রী পায় এ জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এরপরও অতি মুনাফার লোভে কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এটি দেশ বিরোধী কাজ। আর এ কাজ যে করবে তাকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।
রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের এমপি।
জিএম কাদের বলেন, পবিত্র মাহে রমজান আমাদের জন্য মহান আল্লাহর দেওয়া এক অনুপম নেয়ামত। রমজানের পুরো মাসই আমাদের জন্য যেন বিশেষ প্রশিক্ষণ। সিয়াম সাধনা ধৈর্য, ত্যাগ, সহানুভূতি ও সহনশীলতার শিক্ষা দেয়। আমরা যেন সিয়াম সাধনায় রমজানের পূর্ণ ফজিলত অর্জন করে ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে পারি। আমরা যেন মহান আল্লাহর হেদায়েত অর্জন করতে পারি।
এসবের পরেও খেজুর, লেবু, শসা, বেগুনসহ নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন যেন বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?। সাধারণ ভোক্তারা জানেনই না আসলে বাজারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবে কে?
যদিও রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ডিএমপি বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। সোমবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদরদপ্তরে ৬ষ্ঠ তলার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ব্যাংক, বিপণি বিতান, শপিং মলসমূহের নিরাপত্তা, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা শেষে এ কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, পণ্যের দাম যেন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে সেটি নজরদারি করা হবে। এছাড়া বিশেষ কিছু পণ্য যেমন ছোলা-বুট, খেজুর, পেঁয়াজের দাম ও বাজার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজরদারি করা হবে৷