❏ ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ❏ অভিযুক্ত আম্মান সিদ্দিককে গ্রেপ্তারের নির্দেশ
❏ শিক্ষার্থীদের ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ❏ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতন চলতে পারে না: মানবাধিকার কমিশন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস। শনিবার যেকোনো অপ্রীতিকর অবস্থা এড়ানোর জন্য ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত সহপাঠী আম্মান সিদ্দিককে সাময়িক বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় ইন্ধনদাতাদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছয় দফা দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। শনিবার এক বিবৃতিতে কমিশন জানায়, সম্প্রতি শিক্ষাঙ্গনে নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানিসহ নৈতিক স্খলনের যেসব ঘটনা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে তা কমিশনকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আত্মহত্যার ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নারী শিক্ষার্থীরা প্রায়ই হয়রানির শিকার হচ্ছেন সে বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হতে হবে এবং শিক্ষার্থীবান্ধব সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ তৈরির জন্য মনোযোগী হতে হবে। কোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলতে পারে না। ক্যাম্পাসে সরেজমিন দেখা যায়, ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নিউটন হাওলাদার বলেন, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর অবস্থা এড়ানোর জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় শনিবার সকাল থেকেই উত্তাল পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্ল্যাকার্ড হাতে সুষ্ঠু বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ছয় দফা দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। দাবি পূরণ না হলে আগামী সোমবার (১৮ মার্চ) সকালে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
দাবিগুলো হলো: অবন্তিকার হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে; অভিযুক্ত দ্বীন ইসলাম ও আম্মানকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে; অভিযুক্ত দুইজনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে; ভিক্টিম ব্লেমিং যারা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, অবন্তিকার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বাদী হয়ে মামলা করতে হবে এবং নারী নিপীড়ন সেলকে আরও সক্রিয় করতে হবে।
এরআগে শুক্রবার রাতে জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে (আম্মান সিদ্দিকী) দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দেন ফাইরুজ অবন্তিকা। এরপর ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এরপর থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। পরে উপাচার্য এসে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অবন্তিকার আত্মহত্যাকে হত্যা দাবি করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তার মা ও স্বজনরা। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ পুরো পরিবার।
পরিবার জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী আর সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম মিলে অবন্তিকাকে অনলাইনে ও সরাসরি হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। একে হত্যা দাবি করে জড়িতদের বিচার দাবি তাদের।