চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও নেতৃত্বে ফিরেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ ভিপি ও জিএসসহ মোট ২৪টি পদে বিজয়ী হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৪টায় সপ্তম চাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, 'নির্বাচন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রার্থী ও ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল উৎসবমুখর।'
সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত মো. ইব্রাহিম হোসেন। ইতিহাস বিভাগের এমফিল শিক্ষার্থী ও সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি তিনি। ইব্রাহিম পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ হাজার ৩১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব। ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক তিনি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মো. শাফায়াত পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৪ ভোট।
চাকসুর এবারের নির্বাচনে মোট ২৬টি পদের মধ্যে ২৪টি দখলে নেয় শিবির সমর্থিত প্যানেল। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল শুধু সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয়লাভ করে। এজিএস পদে ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪ ভোট, শিবির সমর্থিত সাজ্জাদ হোছন পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট। এছাড়া সহ খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয়লাভ করেছেন তামান্না মাহবুব নামে এক ছাত্রী।
চাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সর্বশেষ বিজয় ছিল ১৯৮১ সালে। সেবার ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জসিম উদ্দিন সরকার ও জিএস হন আবদুল গাফফার। এরপর ১৯৯০ সালের নির্বাচনে 'সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য'র কাছে পরাজিত হয় শিবির।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ক্যাম্পাসে শিবির নিষিদ্ধ হয় এবং সংগঠনটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। প্রায় এক দশকের নিষ্ক্রিয়তার পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শিবির আবারও প্রকাশ্যে রাজনীতিতে ফেরে।
প্রায় এক বছর না যেতেই ২০২৫ সালের চাকসু নির্বাচনে তাদের এমন বিজয় ক্যাম্পাসজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত মাত্র সাতবার চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে: ১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১, ১৯৯০ এবং এবার ২০২৫ সালে।
১৯৯০ সালের পর দীর্ঘ তিন দশক চাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল। এবার নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করেছে।
প্রথমবার ভোট দেওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, 'জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি, কিন্তু চাকসুতে দিয়েছি, এটাই আমাদের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতার শুরু।'