পাকিস্তানের হামলায় নিজেদের একাধিক স্থানীয় ক্রিকেটারের মৃত্যুর ঘটনায় পাক ক্রিকেট দলের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজ না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আফগানিস্তান। আগামী মাসে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ মাঠে গড়ানোর কথা ছিল। ১৭ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত রাওয়ালপিন্ডি এবং লাহোরে ম্যাচগুলো হতো।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সামাজিক মাধ্যম এক্সে ত্রিদেশীয় সিরিজ না খেলার সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
তারা জানিয়েছে, পাকিস্তান তাদের পাকতিকা প্রদেশে বিমান হামলায় চালায়। এতে তিন স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হন। তারা প্রদেশের রাজধানী শারানায় ‘ফ্রেন্ডলি’ ম্যাচ খেলে বাড়ি ফেরার পথে পাক হামলায় প্রাণ হারান।
আফগান বোর্ড বলেছে, তাদের মৃত্যু আমাদের ক্রীড়া কমিউনিটির জন্য একটি বিশাল ক্ষতি। যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা আসন্ন ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এদিকে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানের মাটিতে এবারই প্রথমবারের মতো খেলত আফগানিস্তান। কিন্তু দুই দেশের সেনাদের সংঘর্ষের কারণে এটি আর হচ্ছে না।
২০২৩ সালের এশিয়া কাপ এবং এ বছরের শুরুতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পাকিস্তানে গিয়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের কোনো ম্যাচ ছিল না।
গত দুই সপ্তাহ ধরে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সীমান্তে সংঘর্ষ ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানের বিমান হামলায় কয়েকশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
দুই দেশের সম্পর্ক যখন খারাপ হচ্ছিল তখনই এ ত্রিদেশীয় সিরিজটি আয়োজন করা হয়েছিল। অবশ্য এ নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
স্পিন বোলদাক জেলার জনস্বাস্থ্য প্রধান করিমুল্লাহ জুবাইর আঘা টোলো নিউজকে জানান, 'বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। গত রাতের বিমান হামলায় আমরা ৪০ জন নিহত ও ১৭০ জন আহতের খবর পেয়েছি।' তিনি আরও জানান, অনেক আহতের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতের মূলে রয়েছে পাকিস্তানের তালেবানপন্থি সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান (টিটিপি)। বেশ কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়া এই গোষ্ঠীটি পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য দিনকে দিন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
আফগাস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া টিটিপির প্রধা ঘাঁটি। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গোষ্ঠীটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের অভিযোগ—আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের মদত ও আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে টিটিপি। তবে কাবুল বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
গত ৯ অক্টোবর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হামলা চালিয়ে টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে হত্যা করে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। হামলার দু’দিন পর ১১ অক্টোবর আফগানিস্তানের সঙ্গে লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়ার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র সংঘাত শুরু হয় পাক-আফগান সেনাবাহিনীর মধ্যে।
সূত্র: ইএসপিএন