শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে

❏ চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৬ ❏ তাপপ্রবাহের মধ্যে ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি ❏ ৪ বিভাগে হতে পারে বজ্রবৃষ্টি ❏ তাপপ্রবাহ থাকবে আরও এক সপ্তাহ

প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়ছে দেশ। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত দুইদিন ধরে বেড়েছে গরম। সেই সঙ্গে চলমান তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন বিভাগে। ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে রাজধানীবাসীর। মঙ্গলবার দুপুরের পর ঢাকার আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। বিকেলে রাজধানীর মিরপুর, বারিধারা, বাংলামোটর ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়।  এদিকে ঢাকাসহ দেশের চার বিভাগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর এবং সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া নিয়ে কোনো সুসংবাদ দিতে পারছে না বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানান, আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার পাশাপাশি বৃষ্টির সম্ভাবনার কথাও জানাতে পারেনি সংস্থাটি। সেই সঙ্গে আবহাওয়া অফিসের ৪৪টি স্টেশনের মধ্যে ৪০ স্টেশনের উপর দিয়ে মৃদু, মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাস হচ্ছে গরমের মাস। এর বাইরেও যদি বৃষ্টি না থাকে তাহলে জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসও গরমের মাস বলা হয়। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে কালবৈশাখীর বৃষ্টি থাকে এবং জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে বর্ষাকালের বৃষ্টি থাকে। কালবৈশাখীর বৃষ্টির স্থায়িত্ব কম থাকে এবং জুন, জুলাই ও আগস্টের বৃষ্টির স্থায়িত্ব বেশি থাকে। কালবৈশাখীর বৃষ্টিতে তাৎক্ষণিকভাবে তাপমাত্রা অনেক কমে এবং বর্ষাকালে অনেক সময় নিয়ে বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা সামান্য কিছু কমে। বর্তমানে যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে তাপমাত্রা আরও কিছুটা বাড়বে।

সারা দেশে বৃষ্টি কবে হবে— এমন প্রশ্নে শাহীনুল ইসলাম বলেন, কালবৈশাখীর বৃষ্টি কখন হবে না হবে, সেটা আগে থেকে বলা মুশকিল। যেই সিস্টেমগুলো বাংলাদেশের বাইরে তৈরি হয়, সেগুলোর বিষয়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা আগে পূর্বাভাস পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেগুলো তৈরি হয়, সেগুলোর বিষয়ে পূর্বাভাস দিতে বেশি সময় পাওয়া যায় না। তবে দেশের অভ্যন্তরে যে সিস্টেমগুলো তৈরি হয়, সেগুলোর বিষয়ে স্পষ্টভাবে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়। দেশ এবং দেশের বাইরে তৈরি হওয়া সিস্টেমগুলোর বিষয়ে আমাদের মডেলগুলো যেসব ধারণা দেয়, তার উপর বিশ্লেষণ করে আমরা পূর্বাভাস দেই। তবে এটা যে, শতভাগ প্রতিফলিত হবে সেটারও কোনো নিশ্চয়তা নাই। আমাদের সিস্টেম অনুযায়ী আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো কোনো বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে না।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৭ শতাংশ। আজকের তাপমাত্রা চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিকে তাপপ্রবাহের কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে পরামর্শ দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতেও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে।

অপরদিকে, চলমান তাপপ্রবাহের কারণে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার জন্য ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ৫-৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখুন। এ সময় জমিতে যেন পানির ঘাটতি না হয়।

এদিকে, তীব্র গরমে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। বাইরে কড়া রোদ থেকে বাঁচতে অনেকেই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউবা আবার লেবুর শরবত খেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। কয়েকজন রিকশাচালক বলেন, রোদের তাপে মনে হচ্ছে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। সকাল ও বিকেলের পর থেকে যাত্রী পেলেও দুপুরে বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ফাঁকা। পেটের দায়ে এই তীব্র গরমেও রিকশা চালাতে হচ্ছে।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন