গাজায় ইসরাইলের বর্বরতা চালানোর ছয় মাস পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সেই অস্থিরতার মধ্যে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান থেমে গেছে এবং গোটা জাতির নজর এখন এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গণগ্রেপ্তার করছে দেশটির পুলিশ। এমনকি এক মার্কিন অধ্যাপকও পুলিশ কর্তৃক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এই নারী অধ্যাপককে মাটিতে উপুড় করে ফেলে তার হাত পিছমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরিয়েছে পুলিশ।
সিএনএনের সাংবাদিকদের রেকর্ড করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি প্রতিবাদ চলার সময় পুলিশ কর্মকর্তারা এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে মাটিতে ফেলে জোরজবরদস্তি গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে, এ সময় ওই শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলতে বলতে সেদিকে এগিয়ে যান অধ্যাপক ক্যারোলাইন ফলিন।
এদিকে ক্যাম্পাস অনুযায়ী বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সুনির্দিষ্ট দাবির ভিন্নতা থাকলেও তাদের মূল দাবি হল ইসরাইল সংযুক্ত কোম্পানি বা ব্যবসার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করা, যেসব কার্যক্রম থেকে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে লাভবান হচ্ছে ইসরাইল।
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরাইলি কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বা বিনোয়োগ বন্ধে তাদের ওপর তেমন কোনো প্রভাব নাও পড়তে পারে। তবে শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিনিয়োগ চিত্র প্রকাশ করা, ইসরাইলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং গাজায় যুদ্ধবিরতিকে সমর্থনের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভে অনড় রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ফিলিস্তিনে চালানো গণহত্যা থেকে যেসব কোম্পানি লাভবান হচ্ছে অথবা তাদের ওপর চালানো নিপীড়নে যেসব ইসরাইলি কোম্পানি সুবিধা পাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমরা সেসব কোম্পানির সমস্ত বিনিয়োগ সরিয়ে ফেলতে বলেছি।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে তাঁবু টানিয়ে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনতার পক্ষে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিক্ষোভে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ৫৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের দাবি, যেসব প্রতিষ্ঠান ইসরাইলে বিনিয়োগ করছে এবং গাজা যুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে তাদের কার্যক্রম যেন বন্ধ করা হয়। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তারা গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নিতে রাজি কিন্তু তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামাবে না।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত সপ্তাহে প্রায় ৫৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হার্ভার্ড, কলাম্বিয়া, ইয়েল, ইউসি বার্কলে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিক্ষোভগুলো প্রায়শই অনুমোদন ছাড়াই এবং তা প্রতিরোধ করতে পুলিশ ডাকা হয়। গত দুই দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসকদের নির্দেশে আইন প্রয়োগকারীরা আটলান্টার এমরি ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে টেজার এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে। কর্মীরা বলছেন, দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা সজ্জা পরিহিত এবং ঘোড়ার পিঠে চড়ে থাকা অফিসাররা টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ভণ্ডুল করেছে।
এমরি ইউনিভার্সিটিতে একজন অধ্যাপককে মাটিতে ফেলার এবং হাতকড়া পরানোর একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায় পুলিশ একজন শিক্ষার্থীকে মাটিতে ফেলে ধস্তাধস্তি করছে। প্রফেসর ক্যারোলিন ফোহলিন তাতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন।
বিক্ষোভকারীদের একটাই কথা, তারা গাজার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা জানায়। তারা চায় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইসরায়েলের সঙ্গে জড়িত সেগুলোতে এবং গাজা যুদ্ধে ইন্ধন জোগায় এমন অস্ত্রে তাদের বিনিয়োগ কমিয়ে আনুক।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, স্পষ্ট ইহুদি বিরোধীতার কোনো ঠাঁই কলেজ ক্যাম্পাসে নেই। তবে হোয়াইট হাউস বলেছে, রাষ্ট্রপতি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা করেছে এবং কর্তৃপক্ষকে তাদের বাক স্বাধীনতার অধিকারকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছে।