রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫

জাকির নায়েককে কেন ধরতে মরিয়া ভারত?

জাকির নায়েককে কেন ধরতে মরিয়া ভারত?

বিশ্বখ্যাত ইসলামিক ব্যক্তিত্ব ডা. জাকির নায়েক আগামী ২৮ নভেম্বর ঢাকায় আসতে পারেন বলে একটি খবর বেরিয়েছে। জানা গেছে বাংলাদেশে দুইদিনের সফরে এসে একটি দাতব্য অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা আছে তার। কিন্তু, জাকির নায়েক ঢাকায় এলে তাকে যেন গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ সরকার দিল্লির হাতে তুলে দেয়, সেজন্য আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। 



ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ আহ্বান ইতোমধ্যেই নজরে এসেছে বাংলাদেশ সরকারের। এ নিয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম।


শনিবার (১ নভেম্বর) তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র একজন বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে যে মন্তব্য করেছেন, তা আমাদের নজরে এসেছে।



পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘আমরাও বিশ্বাস করি যে, কোনো দেশের অন্য দেশের অভিযুক্ত বা পলাতক ব্যক্তিকে আশ্রয় দেয়া উচিত নয়।’


বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ জবাব থেকেই বোঝা যাচ্ছে, হয়তো বাতিল হয়ে যাবে জাকির নায়েকের সম্ভাব্য ঢাকা সফর।  



এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারত আশা করে, জাকির নায়েক ঢাকা সফরে এলে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এবং ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ দূর করবে।

 

তিনি বলেন, জাকির নায়েক একজন পলাতক আসামি। ভারতে তার খোঁজ চলছে। তাই আমরা আশা করি, সে যেখানেই যাক, সেখানকার লোকেরা তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং আমাদের নিরাপত্তার উদ্বেগগুলো পূরণ করবে।


প্রসঙ্গত, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের রোষানলে পড়ে ২০১৬ সালে নিজ দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান জাকির নায়েক। সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন তিনি। ওই বছর তার পিস টিভির সম্প্রচারও বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই বছর ঢাকায় হোলি হার্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর জাকির নায়েকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশের তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারও। এরপর গত বছর তার পতন হলে আলোচিত এ ইসলামিক স্কলারের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। 


জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগটি প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের। এছাড়া নানা সময়ে তার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কথা বলার অভিযোগ রয়েছে। তবে সব অভিযোগই অস্বীকার করে এসেছেন তিনি।


এছাড়া, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় হলি আর্টিজানের ঘটনায় হামলাকারীদের দুজন নিব্রাস ইসলাম ও রোহান ইমতিয়াজ তার বক্তব্যের দ্বারা প্রভাবিত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এই অভিযোগও জাকির নায়েক বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।


২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার ওই ঘটনার পরই মূলত ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়েন জাকির নায়েক। ওই বছরই ভারত ও বাংলাদেশে তার মালিকানাধীন পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পরপরই তার বিরুদ্ধে আইনের ব্যত্যয় ঘটাবার অভিযোগ আনা হয়। ভারতীয় কাউন্টারটেররিজম এজেন্সিও নায়েকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ আনে৷ এ অবস্থায় জাকির নায়েক পালিয়ে যান মালয়শিয়ায়।


সুন্নি ইসলামের সালাফি মতবাদের প্রচারক জাকির নায়েক। তিনি ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ)-এর প্রধান৷ দুবাই থেকে এই ফাউন্ডেশনের অধীনেই পিস টিভি প্রচারিত হয়। সারাবিশ্বে এই চ্যানেল দর্শক প্রায় ২০ কোটি। মালয়শিয়ায় প্রবেশেরর পর থেকে জাকির নায়েকের আইআরএফ কাতার, তুরস্ক ও পাকিস্তান থেকে অর্থ পাচ্ছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তবে এমন সময় এই রিপোর্টগুলো প্রকাশিত হয়, যখন ভারতে মুসলিমদের প্রতি আচরণ নিয়ে তুরস্ক, পাকিস্তান ও মালয়শিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করছিল।


এদিকে বারবার চেষ্টা করেও জাকির নায়েককে ফেরত আনতে পারছে না ভারত। ইন্টারপোল তাদের রেডনোটিশ জারির অনুরোধ তিনবার ফেরত দিয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারও একাধিকবার জাকির নায়েককে ফেরত দিতে ভারতের অনুরোধ ছুড়ে ফেলেছে।


জিন্দাল স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের ডিন শ্রীরাম চাউলিয়ার মতে, ভারত জাকির নায়েককে ফেরত চায় কারণ তিনি ভারতের একটি নেতিবাচক প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন। ভারতের তরুণ মুসলিমদের ওপর নায়েকের প্রভাব নিয়েও চিন্তিত নতুন দিল্লি৷ ভারতে বেশ কয়েকটি ‘স্লিপার আইএস সেল’ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যারা তার দ্বারা অনুপ্রাণিত।


এর আগেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আল-কায়েদার বেশ কয়েকজন অনুসারী জাকির নায়েক দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে স্বীকার করেছেন। এছাড়া জিহাদ, হিন্দুত্ববাদ ও নারীর অধিকার নিয়ে তার চিন্তাধারা নিয়ে ভারতে ব্যাপক সমালোচিত জাকির নায়েক।


মার্কিন এনজিও ফেয়ার অবজারভারের প্রতিষ্ঠাতা অতুল সিং বলেন, জাকির নায়েক বিশ্বাস করেন পুরুষ তাদের স্ত্রীদের হালকা প্রহার করতে পারেন এবং তারা তাদের দাসীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার অধিকার রাখেন। 


তিনি বলেন, একটা পর্যায়ে এসে আপনাকে প্রত্যেক মানুষের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে৷ জাকির নায়েককে কোনও প্লাটফর্ম মনে করার কোনও কারণ নেই, তাকে জেলে দেওয়া উচিত।


সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ