❏ পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ হেলিকপ্টারে থাকা সব সফরসঙ্গীর মৃত্যু ❏ পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা তেহরানের
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হয়েছেন। তার সঙ্গে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের সব আরোহী নিহত হয়েছেন। ইরানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও হেলিকপ্টারে থাকা সব যাত্রী দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।’
ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজও একই তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবরে বলা হয়, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দেশের জনগণের জন্য দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনার শিকার হন। তিনি শহীদ হয়েছেন। হেলিকপ্টারে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ অন্য আরোহীদের সবাই শহীদ হয়েছেন। এর আগে ইরানের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে। রোববার ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাটি ঘটে। হেলিকপ্টারে ইরানের প্রেসিডেন্ট-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন। দুর্ঘটনার পর বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছিল। এলাকাটিতে ভারী বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার কারণে বেশি দূরত্বে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার কথা আজ সকালে নিশ্চিত করেন ইরানি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট। পরে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়, এই দুর্ঘটনায় হেলিকপ্টারের কোনো যাত্রীর বেঁচে থাকার চিহ্ন নেই। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। এটির মডেল বেল-২১২।
এদিকে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ অন্যান্য সফরসঙ্গীদের নিহতের ঘটনায় দেশজুড়ে ৫ দিন শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
সোমবার এক শোকবার্তায় খামেনি বলেন, ‘অত্যন্ত শোকের সঙ্গে আমি সৈয়দ ইব্রাহিম রাইসি এবং তার সফরসঙ্গীদের মৃত্যু সংবাদ গ্রহণ করেছি। রাইসি ছিলেন একজন নিরলস ধর্মীয় পণ্ডিত, একজন যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট, একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক এবং ইসলামের একজন একনিষ্ঠ সেবক।’
‘খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ইরানকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি; কিন্তু তার মধ্যেও দেশের যথাসাধ্য সেবা করেছেন। রাইসির পরলোকগমনের মধ্যে দিয়ে ইরান এবং ইসলামের অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে। ইরান একজন আন্তরিক, নিবেদিতপ্রাণ এবং অমূল্য দেশসবক হারালো।
হেলিকপ্টারটিতে রাইসুর সফরসঙ্গীহিসেবে ইরানের পররাষ্টমন্ত্রী হোসাইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ ৬ জন সফরসঙ্গী ছিলেন। সোমবার কপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে। ইরানের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ধ্বংস হয়ে যাওয়া সেই চপারটির কোনো যাত্রীই বেঁচে নেই।
তাবরিজ থেকে মঙ্গলবার উত্তরপূর্বের নগরী মাশহাদে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছে ফার্স নিউজ। মাশহাদে জন্ম এবং বেড়ে উঠেছিলেন রাইসি। তার আগে স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৪টার দিকে তাবরিজ নগরীর একটি প্রার্থনা হলে নিহতদের স্মরণে বড় ধরণের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড পরিচালিত ইরানের সংবাদ সংস্থা ফার্স নিউজ আরও জানায়, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে রাইসি এবং নিহত অন্যান্যদের মৃতদেহ নিয়ে একটি বিশাল মিছিল তাবরিজ মার্টিরস স্কয়ার থেকে নগরীর বিমানবন্দরে যাবে। সেখান থেকে মৃতদেহগুলো মাশহাদ নগরীতে নেয়া হবে।