রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রেমাল তাণ্ডবে নিহত ১৩

ঘূর্ণিঝড় রেমাল তাণ্ডবে নিহত ১৩

❏ অন্ধকারে উপকূলীয় এলাকা ❏ দেড় লাখ ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত ❏ বেড়ীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত গ্রামের পর গ্রাম

❏ ভেসে গেছে হাজার বিঘা মাছের ঘের

ঘূর্ণিঝড় রেমাল দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলাসহ মধ্যভাগেও তাণ্ডব চালিয়েছে। এতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আট জেলায় অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকেই। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ১৯ জেলার ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দেড় লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বেড়ীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ভেসে গেছে হাজার বিঘা মাছের ঘের। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে তলিয়ে অসংখ্য গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের পরে সোমবার বিকাল থেকে বাতাসের গতি আরও বেড়েছে। ফলে ভাঙা বাঁধ মেরামত করা যায়নি। তাৎক্ষনিক উদ্ধারকাজে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি বিজিবিও অংশ নিয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে অচল হয়ে গেছে ৪৫ জেলার মোবাইল নেটওয়ার্ক।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। অন্ধকারে আছে উপকূলের মানুষ। এছাড়া সোমবার বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সারা দেশের প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। এর মধ্যে, দুই কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ গ্রাহক ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন। এছাড়া, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ওজোপাডিকোর ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১ গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন।

ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের মধ্যে পটুয়াখালীতে ৩ জন, ভোলায় ৩ জন, বরিশালে ২ জন এবং খুলনা, লক্ষ্মীপুর, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় একজন করে মারা গেছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

পটুয়াখালী: পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে মারা গেছেন তিনজন। এর মধ্যে দুমকি উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ায় গাছচাপায় জয়নাল হাওলাদার নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার পাঙ্গা‌শিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড নলদোয়া‌নি স্লুইসগেট এলাকার বাসিন্দা। পটুয়াখালীর বাউফলে ঘূর্ণিঝড় রিমালে মৃত্যু হয়েছে মো. আব্দুল করিম নামে এক পথচারীর। বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ গেটের সামনে ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। এর আগে রোববার দুপুরে সৈকত-সংলগ্ন ফুফুর বাড়িতে যাওয়ার সময় সাগরের ঢেউয়ে তলিয়ে যায় মো. শরীফুল ইসলাম (২৪)। এক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলের কাছ থেকে মৃত শরীফুলকে উদ্ধার করেন স্থানীয় মানুষেরা। শরীফুল পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধুলাশ্বর ইউনিয়নের অনন্তপাড়া গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে।

ভোলা: জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে নারী ও শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোররাতের দিকে লালমোহন, দৌলতখান ও বোরহান উদ্দিন উপজেলায় ঘরচাপায় তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- মনেজা খাতুন (৫৪), মাইসা (৪) ও জাহাঙ্গীর (৫০)। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, গতরাতে লালমোহন উপজেলার চরউমেদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তীব্র বাতাসে ঘর চাপায় মনেজা খাতুন মারা যান। এছাড়া একই সময় দৌলতখান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে ঘরের উপর গাছচাপায় মাইশা (৪) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। বোরহান উদ্দিন উপজেলার সাচরা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাথানবাড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর (৫০) এর মৃত্যু হয় ঘরের ওপর গাছ চাপা পড়ে।

বরিশাল: সোমবার (২৭ মে) ভোরে বরিশাল নগরীর রূপাতলী এলাকায় বহুতল ভবনের দেয়াল ধসে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একজন। পুলিশ জানিয়েছে, চারজন রেন্টুরেন্টে অবস্থান করছিলেন। বাতাসের তীব্রতায় আকস্মিক পাশের চারতলা ভবনের একটি অংশের দেয়াল ধসে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন হোটেল মালিক লোকমান ও কর্মচারী মোকছেদুল। আহত হন কর্মচারী সাকিব। তাকে শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।

খুলনা: খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে লালচাঁদ মোড়ল (৩৬) নামের এক যুবক মারা গেছেন। রোববার রাতে উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গাওঘরা গরিয়ারডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। লালচাঁদ মোড়ল গরিয়ারডাঙ্গা গ্রামের গহর মোড়লের ছেলে। তিনি কৃষিকাজ করতেন।

লক্ষীপুর: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ঘরচাপা পড়ে পুষ্প (৭) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৭ মে) বিকেলে উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চাঙ্গিরগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘরে থাকা ওই শিশুর নানি হোসনোয়ারা বেগম আহত হয়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম: সোমবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার টেক্সটাইল এলাকায় দেয়াল চাপায় মারা যান এক পথচারী। স্থানীয়রা জানায়, ঝড়ের সময় ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় একটি দেয়ালের পাশে আশ্রয় নেন সাইফুল ইসলাম হৃদয়। হঠাৎ সীমানা দেয়ালটি ভেঙে পড়লে চাপা পড়ে মারা যান হৃদয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস তার মরদেহ উদ্ধার করে।

সাতক্ষীরা: রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল নামে ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মারা যান। একইদিন বিকেলে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে প্লা‌বিত এলাকা থেকে বোন ও ফুফুকে রক্ষা করতে গিয়ে স্রোতে ভেসে প্রাণ হারান শরীফ হাওলাদার নামে এক যুবক।

কুমিল্লা: কুমিল্লায় বিদ্যালয়ে ক্লাসরত অবস্থায় পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন সাততলা ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম সাগর (১২) নামে ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। সোমবার (২৭ মে) বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার নোয়াগাঁও চৌমুহনী এলাকায় নুর আইডিয়াল স্কুলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাইফুল ইসলাম সাগর সদর দক্ষিণ উপজেলার শাকতলা গ্রামের অলি হোসেনের ছেলে। সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন