সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ডিজিটাল ও জনপরিসরকে সমুন্নত রাখার আহবান

ডিজিটাল ও জনপরিসরকে সমুন্নত রাখার আহবান

বাংলাদেশে ডিজিটাল ও জনপরিসর, বিদ্যমান সমস্যা এবং আমাদের করণীয় নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

আজ রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে  বেসরকারী গবেষণা ও অধিকারভিত্তিক সংগঠন ভয়েস আয়োজিত সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।


সভার শুরুতেই ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকান্ডের নিন্দা জানানো হয়। 

বক্তারা অনলাইন অপতথ্যের প্রভাবে সংঘটিত দুটি প্রধান সংবাদপত্র প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারকে লক্ষ্য করে হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 

তাছাড়া, নারী সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবি, নিউ এইজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবিরকে শারীরিকভাবে হয়রানির বিষয়েও উৎকন্ঠা প্রকাশ করেন। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ভাঙচুর করা হয়েছে, যা স্বাধীন এবং প্রগতিশীল স্থাপনাগুলিকে নীরব করার প্রতিশোধমূলক প্রচেষ্টা প্রকাশ করে।  

সভায় অংশগ্রহণকারী্রা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসা ডিজিটাল ও জনপরিসরের বিদ্যমান সমস্যাসমূহ নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য, দমন-পীড়ন, ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দমন, সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা এবং করণীয় বিষয়ে বাস্তবসম্মত সুপারিশ উঠে আসে।

মূল বক্তব্যে ভয়েস-এর ডেপুটি ডিরেক্টর (প্রোগ্রামস) মুশাররাত মাহেরা ডিজিটাল ও জনঅধিকার বোঝার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ডিজিটাল ও জনপরিসর আইন, নীতি, প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক চর্চার মাধ্যমে গঠিত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যভিত্তিক প্রচারণা বা ‘জেন্ডার অপতথ্য’-এর প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যা বিভাজন, বিশৃঙ্খলা ও ঘৃণা ছড়িয়ে সমাজের শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে।” তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা জোরদারের আহ্বান জানান।  

প্যানেল আলোচনায় বিভিন্ন সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনৈতিক, নীতিগত ও উন্নয়নমূলক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন বিশিষ্ট বক্তারা। বিশিষ্ট কলামিস্ট ও একটিভিস্ট ডাঃ জাহেদ-উর-রহমান অধিকারভিত্তিক আইন সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “মানবাধিকার ও বৈশ্বিক অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে অনলাইন এবং অফলাইনে। দায়িত্বশীল নাগরিকদের সমস্ত দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এক থাকা উচিত। পিছিয়ে না থেকে, বরং যেখানে দাঁড়িয়েছি সেখান থেকে আমাদের কণ্ঠস্বর তুলে চলতে হবে।“ 

গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল বলেন, “গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতা এমন এক অবস্থা তৈরি করেছে যেখানে নারী নির্যাতন উদযাপন করা হয়। যেখানে অন্তর্ভুক্তির কথা বলে বৈষম্যের নীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। 

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব দীপ্তি চৌধুরী বলেন, “বাক-স্বাধীনতা মানে অপরের অধিকারকে সমুন্নত রেখে নিজের চিন্তাধারা এবং বিশ্বাস তুলে ধরা। তবে যদি কখনো কারো অধিকার লংঘিত হয় সেটা বিচার করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।“

মানবাধিকারকর্মী ও বিশ্লেষক মঞ্জুর রশীদ নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে জোর দেন। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রয়েছে। স্ব-স্ব অবস্থান থেকে যদি জোরালো আওয়াজ তোলা হয়, তাহলে পরিবর্তন আসবেই। সবাই একত্রিত হয়ে এগিয়ে আসলেই শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।“ 

ডিজিটাল অপতথ্য বিশেষজ্ঞ তামারা ইয়াসমিন তমা বলেন, “বর্তমানে শুধু নারীদের নয়, পুরুষদের নিয়েও খুব দ্রুত অপতথ্য ছড়ানো হয়। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদেরকে ট্যাগ লাগালে অপতথ্য ছড়ায় দ্রুত। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। তদন্ত করে দুস্কৃতিকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তবেই আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।”


সভায় ভয়েস-এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদও ডিজিটাল স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের অধিকার এবং সম্মুখসারির অধিকাররক্ষকদের নিরাপত্তা রক্ষায় সংগঠনটির দীর্ঘদিনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। 

তিনি বলেন, “ডিজিটাল দমন ও অপতথ্য যখন তীব্র হচ্ছে, তখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের অধিকার রক্ষায় আমাদের একসঙ্গে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি।


সভায় অংশগ্রহণকারীরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল নীতি, শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, শক্তিশালী মিডিয়া ও তথ্য সাক্ষরতা এবং নারী, সাংবাদিক, আদিবাসী অধিকারকর্মীসহ অন্যান্য বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বের ওপর জোর দেন, যারা অনলাইন ও অফলাইনে বৈষম্য, হয়রানি ও হুমকির মুখে বেশি পড়েন।


সভায়  মানবাধিকারকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, নারী ও যুব প্রতিনিধি, আইনজীবী এবং শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার  অংশগ্রহণকারীরা একত্রিত হন।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ