রাজধানীর গোলাপবাগে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অনলাইনেও রয়েছে তাদের সতর্কতা। সড়ক-মহাসড়কে বিশেষ তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে র্যাবের হেলিকপ্টার। বাড়তি নিরাপত্তায় নামানো হয়েছে পাঁচ হাজার আনসার সদস্য।
রাজধানীর মোড়ে মোড়েও চেকপোস্ট (চৌকি) বসিয়েছে পুলিশ। টার্মিনাল এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম অনেক বেশি দেখা গেছে।
বিশেষ করে রাজধানীর প্রবেশ মুখে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা।
খুলনা, বরিশাল, যশোর, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল থেকে ঢাকায় ঢোকার প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ীতে, দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার পোস্তগোলা ও বাবুবাজার, উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার আমিনবাজার, গাবতলী ও আবদুল্লাহপুরে শুক্রবার সকাল থেকে এ তল্লাশি চালানো হয়।
দূরপাল্লার বাসে সব যাত্রীকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্দেহভাজনদের আটকও করা হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার অনেক কম দেখা গেছে। রেলপথ ও সড়কপথে যাত্রী সংখ্যাও তুলনামূলক অনেক কম।
এরআগে গত বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত ও শতাধিক আহত হন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, অপ্রীতিকর ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এড়াতে তল্লাশি ও নজরদারি করছে পুলিশ। সন্দেহভাজন মনে হলে শরীর, ব্যাগ, এমনকি মোবাইল ফোনও চেক করা হচ্ছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে র্যাব ফোর্সেস। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, নাশকতা রোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
জনগণের নিরাপত্তা ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও, যে কোনো ধরনের হামলা ও নাশকতা রোধে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, স্থান ও প্রবেশপথসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যাব ফোর্সেসের চেকপোস্টে নিয়মিত তল্লাশি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে বিভিন্ন দুষ্কৃতকারী ও সুযোগ সন্ধানীদের বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির তৎপরতা রোধে দেশব্যাপী র্যাবের কার্যক্রম চলছে। অনলাইনে দুষ্কৃতকারীরা যাতে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক সাইবার নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়াও, যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাব স্পেশাল ফোর্স টিম, ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও র্যাবের হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।
সরেজমিন রাজধানীর প্রবেশপথ উত্তরার আবদুল্লাহপুর, কমলাপুর রেল স্টেশন, লঞ্চ ঘাট, গাবতলী, পোস্তগোলা ব্রিজ, বাবুবাজার ব্রিজ, সদরঘাট, পূর্বাচল ৩০০ ফিট, কাঁচপুর ব্রিজসহ বেশকিছু পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে ডিএমপির থানাগুলোতেও বাড়ানো হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। তিনজনকে একসঙ্গে দেখলেই থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পেলে নেয়া হচ্ছে থানাতে।
জানা গেছে, প্রতিটি জোনের সব থানাকে ১০-১২ জন করে অফিসার ও কনস্টেবল নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে কয়েকটি টিম করে পাড়া-মহল্লায় তল্লাশি ও অভিযানের নামে মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সহায়তায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, উপরের নির্দেশে তারা রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে যেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেই দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।