পোলিওর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে তৈরি মুখে খাওয়ার একটি নতুন পোলিও টিকা (এনওপিভি-২) আগে পোলিও’র টিকা দেয়া হয়নি, এমন নবজাতকের জন্য নিরাপদ।
একইসঙ্গে তাদের মধ্যে সফলভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম। প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত আইসিডিডিআর,বি-র বিজ্ঞানী এবং সহযোগীদের একটি গবেষণায় প্রথমবারের মতো এই ফলাফল পাওয়া গেছে।
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত চাঁদপুরে অবস্থিত আইসিডিডিআর,বি-র মতলব হেলথ রিসার্চ সেন্টারে একটি র্যান্ডমাইজড, ডাবল-ব্লাইন্ড, কন্ট্রোল্ড, ফেজ-২ ট্রায়াল পরিচালিত হয়। গবেষকরা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তৃতীয় ত্রৈমাসিকে রয়েছেন—এমন নারী এবং তাদের নবজাতকদের গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করেন।
গবেষণায় নবজাতকদের চার সপ্তাহের ব্যবধানে এনওপিভি-২ টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার পর তাদের সংবেদনশীলতা, সহনশীলতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এনওপিভি-২ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম। ৯৯ শতাংশ নবজাতকের মধ্যে রোগ প্রতিরোধমূলক নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
গবেষণায় বলা হয়, মুখে খাওয়ার পোলিও টিকায় (ওপিভি) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উজ্জীবিত করার জন্য জীবন্ত কিন্তু ক্ষতি করতে অক্ষম পোলিও ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। শুধু বিরল কিছু ক্ষেত্রে, প্রচলিত ওপিভি-তে ব্যবহূত টাইপ-২ পোলিও ভাইরাস বিবর্তিত হয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং স্নায়ুতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকেশন ইনিশিয়েটিভ মুখে খাওয়ার পোলিও টিকা থেকে টাইপ-২ পোলিও ভাইরাস বাদ দিয়েছে। শুধু টাইপ-১ এবং টাইপ-৩ পোলিও ভাইরাস মোকাবিলার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টাইপ-২ পোলিও ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য এনওপিভি-২ নামে একটি মুখে খাওয়ার পোলিও টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে, যার মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রের রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা কম। টিকাটি পূর্বে যারা ইন্যাক্টিভেটেড পোলিও ভ্যাকসিনের (আইপিভি) অন্তত একটি ডোজ পেয়েছে, তাদের ওপর পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে, এটির মাধ্যমে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা পূর্বের প্রচলিত মুখে খাওয়ার টিকার চেয়ে কম।
এজন্য নবজাতক, যারা পোলিও সংক্রমণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত, তাদের নিয়ে করা এই নতুন গবেষণার ফলাফল জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য পোলিও নির্মূলে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই গবেষণার ফলাফলকে পোলিওমুক্ত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছে।
আইসিডিডিআর,বি-র ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও এই গবেষণার নেতৃত্বদানকারী ড. কে. জামান বলেন, পোলিও রোগের ঝুঁকিতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নবজাতকদের মধ্যে সংক্রমণ রোধ করার জন্য মুখে খাওয়ার এই নতুন পোলিও টিকা নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জেন্সি ইউজ লিস্টিং কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে বয়স নির্বিশেষে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য এনওপিভি-২ টিকার ৪৫ কোটিরও বেশি ডোজ বিভিন্ন পোলিওপ্রবণ দেশে বিতরণ করা হয়েছে।’ পোলিওমুক্ত বিশ্ব গড়ার ক্ষেত্রে পুনরায় পোলিও সংক্রমণকে প্রতিরোধ করা খুবই জরুরি, সেক্ষেত্রে এনওপিভি-২ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেইটস ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি), দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট (আইভিআই) এবং আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়।