শনিবার, ৩ মে, ২০২৫

বারোমাসি আম চাষে স্বাবলম্বী চাষী

বারোমাসি আম চাষে স্বাবলম্বী চাষী

কয়েক বছর আগেও আমের ঘ্রাণ পাওয়া যেত শুধু মৌসুমে। বর্তমানে সারাবছর সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। এসব আম ব্যতিক্রমী উদ্যোগে চাষ করছেন চাষিরা। এমন একজন সফল উদ্যোক্তা জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম। রাজশাহী কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ২০১২ সালে শুরু করেন বারোমাসি আমের চাষ। এখন প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে আম চাষ করছেন এ উদ্যোক্তা। পেয়েছেন এআইপি সম্মাননা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বর্তমানে ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে মৌসুমি আমের বাগান রয়েছে। এর বাইরে ১ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে রয়েছে বারোমাসি কাটিমন আমের বাগান।

রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০০৮ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেছিলাম বরই চাষ। ২০১২ সালে মনে হলো আম চাষের কথা। সে সময়ে ২৭ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করি আম চাষ। একপর্যায়ে কৃষি বিভাগের সহায়তায় আম রপ্তানি হলো সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশে। এতে আরও উৎসাহ পেলাম। বাড়াতে থাকলাম আম বাগানের পরিধি। এখন আমার প্রায় ৮০০ বিঘার মতো আম বাগান আছে।’


তিনি বলেন, ‘সিজনাল আম পরিবর্তন করে আমার ইচ্ছে ছিল সারাবছর মানুষকে আম খাওয়াবো। এতে আরও বেশি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই পরীক্ষামূলক অনেকবার চাষাবাদ করে শীত মৌসুমে আম চাষ করে সফলতা পেয়েছি। এখন আমার বাগানে সারাবছর আম পাওয়া যায়। এখনো পাকা আম গাছ থেকে পেড়েছি। ২০২৪ সালে আমি এআইপি সম্মাননাও পেয়েছি।’


রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দিন দিন আমাদের জেলায় আম উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী নেই দাম। দাম না থাকার কারণ হচ্ছে বেশি আম উৎপাদন। তাই আম চাষ করে লাভবান হতে হলে প্রথমে আম প্রক্রিয়াজাত করতে নজর দিতে হবে। এতে কর্মসংস্থান হবে শত শত মানুষের। লাভবান হবেন চাষিরা।’


রফিকুলের আম বাগানে কর্মস্থান হয়েছে অন্তত দুই শতাধিক মানুষের। ৮ বছর ধরে তার বাগানে কাজ করে আসছেন শামিউল হক। তিনি বলেন, ‘আগে মৌসুমে শুধু আমের বাগানে কাজ করতে পারতাম। কিন্তু এলাকায় রফিকুল ইসলাম বাগান করার পরে সারাবছর আম বাগানে কাজ করতে পাচ্ছি। এতে আমরা লাভবান হয়েছি।’


স্থানীয় আনারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এলাকার বেশকিছু জমি পড়েছিল। ফসল হতো না। রফিকুল ইসলাম এসে এসব জমিতে আম বাগান করেছেন। এতে তিনিও লাভবান হচ্ছেন; আমরাও লাভবান হচ্ছি। কারণ তার বাগানে অনেকে কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছেন।’


নাচোল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সালেহ্ আকরাম বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম বেশ কয়েক বছর ধরে বারোমাসি আম চাষ করে আসছেন। তার বাগানের সিজনাল আম বিদেশেও রপ্তানি হয়। এতে যেমন কর্মস্থান হচ্ছে স্থানীয় শ্রমিকদের; তেমনই বিভিন্নভাবে আম বিক্রি করে চাঙা হচ্ছে জেলার অর্থনীতি।’

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ