বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫

উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি বিভ্রান্তিকর: বিএনপি

উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি বিভ্রান্তিকর: বিএনপি

‘সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’- সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের দেওয়া এমন বিবৃতি অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

গত ২৪ মে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

উপদেষ্টা পরিষদের এই বিবৃতির বিষয়ে আজ (২৭ মে) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পালনে আমরা প্রথম থেকে অদ্যাবদি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে আসছি। সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতির কারণে এবং দুর্বলতার কারণে জনমনে সংশয় ও সন্দেহের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি-দাওয়া এবং এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের নিজস্ব অর্জন। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে’। আমরা বলতে চাই- শীঘ্রই একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই পরাজিত শক্তির ইন্ধন এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র বন্ধ করা সম্ভব। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া জরুরি, এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে শীঘ্রই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করা জরুরি। এই লক্ষ্যে আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে আমরা সব সময়ে নিরুৎসাহিত করি এবং প্রতিরোধ করার অঙ্গীকারাবদ্ধ। অথচ উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে কোনো কোনো মহল তাদের ওপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তুলছে মর্মে একটি বিমূর্ত অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।

এ সময় ‘বিতর্কিত উপদেষ্টাদের’ অপসারণ প্রসঙ্গেও কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ। তিনি বলেন, জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সব শ্রেণি-পেশার শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না হয়, যাতে ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করা যায় সেই জন্য সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং চরিত্র বজায় রাখার স্বার্থে আমরা বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চেয়েছি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই এদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। অথচ সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে জনমনে এ বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও সেলিমা রহমান।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ