যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক নদীস্ফীতির কারণে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০০ ছাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে স্যান অ্যান্টোনিওর পার্শ্ববর্তী কের কাউন্টির গুয়াদালুপ নদী সংলগ্ন এলাকায়, যেখানে মাত্র ৪৫ মিনিটে নদীর পানি ২৬ ফুট (৮ মিটার) বেড়ে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়।
বন্যার সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে 'ক্যাম্প মিস্টিক' নামে একটি গ্রীষ্মকালীন আবাসিক ক্যাম্পে। শুক্রবার (৪ জুলাই) ভোররাতে বন্যা আঘাত হানার সময় ওই ক্যাম্পে প্রায় ৭৫০ জন কিশোরী অবস্থান করছিল। রাতের নিস্তব্ধতায় নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ শিশু ঘুমিয়ে ছিল। ফলে অনেকেই পালানোর সুযোগ না পেয়ে পানিতে ডুবে যায়। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ২৭ জন কিশোরী এবং তাদের তত্ত্বাবধায়ক নিহত হয়েছেন।
উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলো জানিয়েছে, টানা বৃষ্টিপাত ও ভেজা ভূমির কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। নদীর আশপাশের বহু এলাকা এখনও পানিবন্দি এবং বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন। এতে করে নিখোঁজদের সন্ধান এবং বেঁচে থাকা মানুষদের উদ্ধার কার্যক্রম আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা জানান, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে প্রাণহানি আরও ভয়াবহ হতো। তারা শত শত শিশু ও কর্মীকে ঝুঁকির মধ্যে থেকেও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন। তবুও এখনও বহু শিশু নিখোঁজ রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করেছে, বৃষ্টি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এতে নদীর পানি আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে এই দুর্যোগে প্রশাসনের প্রস্তুতি ও দায়িত্ব নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও মাথাচাড়া দিয়েছে। বিশেষ করে আগাম সতর্কবার্তা দিতে আবহাওয়া সংস্থার সক্ষমতা কমে যাওয়া এবং বাজেট হ্রাসের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করছেন বিরোধী দলগুলো।
তবে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই ভয়াবহ বন্যার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দায়ী করা রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। জাতীয় শোকের এই সময়ে দলীয় দোষারোপ না করে একসঙ্গে কাজ করাই সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।”
উল্লেখ্য, ক্যাম্প মিস্টিকে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের অধিকাংশই স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। পরিবারগুলো এখনও তাদের সন্তানদের সন্ধানে অপেক্ষা করছে। উদ্ধারকারী দল ও জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো নিখোঁজদের সন্ধানে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স, হোয়াইট হাউস।