শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মুকুলের জীবনঘনিষ্ঠ উপন্যাস ‘অন্ধকারে একা’

কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রকিবুল ইসলাম মুকুল- বাংলাবাজার

অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ কে সামনে রেখে প্রকাশিত হয়েছে কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রকিবুল ইসলাম মুকুলের জীবনঘনিষ্ঠ উপন্যাস ‘অন্ধকারে একা’। উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে খ্যাতিমান প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অনন্যা।

উপন্যাসটি একুশে গ্রন্থমেলায় পাওয়া গেলেও তার আগে বিভিন্ন অনলাইন বই বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকেও সংগ্রহ করা যাবে। উপন্যাসটির প্রচ্ছদ করেছেন খ্যাতিমান প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ।

জন্মের পর থেকে জীবনের লক্ষ্য, মানে, উদ্দেশ্য খুঁজতেই পেরিয়ে যায় সময়। মানুষ তার নিজেকে আবিস্কারের আগেই হারিয়ে যায় সময়ের অতল গহ্বরে। আর পলকে হারিয়ে যাওয়া সময়টুকুতে প্রেম, দ্রোহ, কাম, লোভ-জিঘাংসা সব কিছুকে ঘিরে ছন্দোবধ্য জীবনের গতিময় স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয় মানুষ।

একসময় সেই স্রোতে হারিয়ে যাবার বেলায় পেছন ফিরে তাকাতেই বৃত্তবন্দী হিসেবে নিজেকে আবিস্কার করে মানুষ। জীবনের চির সত্য আবিস্কারের সেই মুহুর্তে মানুষ বুঝতে পারে সে আসলে ভীষণ একা। তার সেই একাকীত্বের অনুভূতিগুলোর আগের ধুন্ধুমার জীবন-সব কিছুই উঠে এসেছে উপন্যাসটিতে। 


মানুষের মনস্তাত্বিক দ্বন্দ এবং নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া করার সূত্রগুলো দারুণ এবং  সাবলীল গল্পের ধারাবাহিকতায় উঠে এসেছে উপন্যাসটিতে। সেই সঙ্গে শহুরে আটপৌরে জীবনের সঙ্গে গ্রামের সোঁদা মাটিতে মিশে থাকা মানুষগুলোর তুলনামূলক জীবনালেখ্য উপন্যাসটিকে সমৃদ্ধ করেছে। চল্লিশোর্ধ দুই বন্ধু হারুণ ও মতিকে ঘিরে উপন্যাসের গল্প এগিয়ে গেলেও গল্পের পরতে পরতে উঠে এসেছে হারুণ ও মতির পরিবার, প্রেম, ভালোবাসা- কাম, লোভ, ক্ষমতাশালীদের প্রভাব বিস্তার, কুসংস্কার থেকে শুরু করে অনেক কিছু। শেষে একটি খুনকে ঘিরে তৈরি হয় রহস্য। আর সেই রহস্য পাঠককে টেনে নিয়ে যায় উপন্যাসের শেষ পৃষ্ঠায়। যেখানে পাঠকও সূত্র মেলাতে পারেন তার জীবন ও খুনের। 

অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী মনিরুল হক বলেছেন, জীবনঘনিষ্ঠ উপন্যাস এবং সায়েন্স ফ্যান্টাসি লেখক হিসেবে তরুণদের মধ্যে রকিবুল ইসলাম মুকুল নিজের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছেন। তার নিজস্ব লেখার ধরন ছোট ছোট বাক্য এবং সরল কিন্তু সুতোয় গাঁথা গদ্য পাঠককে টেনে নিয়ে যায়। উপন্যাসটি অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাবে। তার আগেও চাইলে পাঠকরা বিভিন্ন অনলাইন বুক-শপ থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।   

উপন্যাস থেকে খানিকটনা- মতির বাড়িতে আসলেই লিচু গাছটার শান বাঁধানো গোড়ায় বালিশ পেতে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে ঝিম মেরে কাটিয়ে দেই ঘন্টার পর ঘন্টা। এলোমেলো হু হু বাতাস ধানের ডগা ছুঁয়ে, ঢোলকলমির কচি ডগা নাচিয়ে ছুটে আসে শালমারার ওপার থেকে।

শান্ত-শীতল সেই বাতাসে অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়। মাঝে মধ্যে নদীর ওপার থেকে সন্ধ্যের পর ভেসে আসে মোহন বাঁশির সুর। সেই সুরে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। মতি দিনের বেলায় ব্যস্ত থাকে বলে ওকে ঘাটাই না। বিকেলের পর থেকে ও আমার সাথে আঠার মতো মিশে থাকে। লিচুতলায় নয়তো টানা বারান্দায় আধো অন্ধকারে চেয়ার পেতে বসে থাকি। আকাশে মেঘেরা ওড়াউড়ি করে।

কখনো ঝকমকে আকাশে তারাদের মিছিলে নিজেদের অস্তিত্ব অনুভব করার চেষ্টা করি। কখনো জোছনার প্লাবনে ভেসে যায় পুরো উঠান। ঝিঁঝিঁ পোকাদের ছন্দময় গীতিনৃত্য আর জোনাকির ওড়াউড়িতে ভুলে যাই একবিংশ শতকের মানুষ আমরা দু’জন। বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে বসে থাকি ঘন্টার পর ঘণ্টা।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ