ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দুই কর্মদিবসে ২১ পয়েন্ট বৃদ্ধির পর সূচক কমল। তবে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বাড়ল। সোমবার ৪ পয়েন্ট সূচক হারালেও লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। সারা দিনে হাতবদল হয়েছে ৫৭৫ কোটি ৮০ লাখ ২ হাজার টাকার শেয়ার, আগের দিন যা ছিল ৫৩১ কোটি ৮৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।
এদিন শেয়ারদর বেড়েছে ৫৪টি কোম্পানির, কমেছে ৬৯টির; আর আগের দিনের দরে ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হয়েছে ২০৭টি কোম্পানির শেয়ার। ৬১ কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি। আগের দিন সূচক ১০ পয়েন্ট বাড়েলেও লেনদেন কমেছিল দেড়শ কোটি টাকার মত। সোমবার লেনদেনের অর্ধেকের বেশি হয়েছে কেবল ২০টি কোম্পানিতে। আর ৮০ শতাংশই হয়েছে ৫০টি কোম্পানিতে। দর বৃদ্ধির শীর্ষে যেসব কোম্পানি দেখা গেছে, তার মধ্যে বেশিরভাগ লোকসানি, কয়েকটি কোম্পানি মুনাফায় থাকলেও সিংহভাগই স্বল্প মূলধনী।
লেনদেনের শীর্ষে আগের দিনের মতই দেখা গেছে তথ্য প্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য। এই খাতের ১১টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ১১১ কেটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার, যা মোট লেনদেনের ২১ শতাংশের বেশি। এছাড়া কেবল বিবিধ খাতে ৫০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।
এর কারণ আবার বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। এই কোম্পানির ৪২ কোটি টাকার বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। এছাড়া জীবন বীমা খাতে ৪৮ কোটি টাকার বেশি, আর খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে লেনদেন হয়েছে ৪৬ কোটি টাকার বেশি। দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে খাতওয়ারি সবচেয়ে ভালো সময় গেছে বিবিধ খাতের। এই খাতের ১১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৮টির, অপরিবর্তিত ছিল তিনটির দর।
জীবন বীমা খাতে সাতটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে তিনটির দর, অপরিবর্তিত ছিল আরও তিনটির দর। এছাড়া অন্য কোনো খাতেই দর বৃদ্ধির সংখ্যা দর হারানোর চেয়ে বেশি ছিল না।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে বেশিরভাগ লোকসানি: এ তালিকার শীর্ষে থাকা সমতা লেদারের দর বেড়েছে ১০ শতাংশ। ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি গত এক যুগে কেবল ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা এবং ২০২১ সালে ৫ পয়সা করে লভ্যাংশ দিয়েছে।
এ কোম্পানির শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৭৭ টাকা। চলতি অর্থবছরের অর্ধবার্ষিকে শেয়ার প্রতি ৪ পয়সা আয় করেছে সমতা লেদার। ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিডিঅটোকারের দর বেড়েছে ৯.৯৯ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ১৩৪ টাকা ১০ পয়সা। দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ১৪৭ টাকা ৫০ পয়সা।
গত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৪০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে। অর্থবছরের অর্ধবার্ষিকে শেয়ার প্রতি ৪৪ পয়সা আয় করেছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা লোকসানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যার আরও এক দিন দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে। কেবল ১১ কর্মদিবসে শেয়ারদর ৪৩ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯ টাকা ৮০ পয়সায়।
গত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৮৬ পয়সা লোকসান দেওয়া এ কোম্পানি চলতি অর্থবছরের অর্ধবার্ষিকে ৫৭ পয়সা লোকসান দিয়েছে। ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া ইউনিয়ন ক্যাপিটালের শেয়ারদর বেড়েছে ৮.৯৭ শতাংশ। লোকসানের কারণে তিন বছর লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানিটি গত সেপ্টেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৫ টাকা ৪৬ পয়সা লোকসান দিয়েছে।
আরেক লোকসানি কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড সিমেন্টের দর ৮.২৮ শতাংশ, আজিজ পাইপসের দর ৪.৩৫ শতাংশ এবং জিকিউ বলপেনের দর ৪.১৪ শতাংশ বেড়েছে। দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা অন্য কোম্পানির মধ্যে জেমিনি সি ফুডের দর ৭.৪৮ শতাংশ, আমরা টেকনোলজির দর ৭.৩৯ শতাংশ এবং প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৪.৭৯ শতাংশ বেড়েছে। শীর্ষ দশের বাইরে একটি কোম্পানির দর ৪ শতাংশ, আটটির দর ৩ শতাংশের বেশি, সাতটির দর ২ শতাংশের বেশি, ৮টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে দরপতনের শীর্ষে থাকা ওয়াইমেক্স ইলেকট্রোডের শেয়ারদর কমেছে ৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিডিকম ৩.৯৪ শতাংশ, তৃতীয় স্থানে থাকা জেএমআই হসপিটালের ৩.৭৪ শতাংশ, চতুর্থ স্থানে থাকা পেপার প্রসেসিংয়ের ৩.৪৫ শতাংশ, পঞ্চম স্থানে থাকা নাভানা ফার্মার ৩.২০ শতাংশ, ষষ্ঠ স্থানে থাকা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৩.০৬ শতাংশ এবং সপ্তম স্থানে থাকা এপেক্স ফুটওয়্যারের দর ৩.০৪ শতাংশ কমেছে।
শীর্ষ দশে থাকা বিডিথাই অ্যালুমিনিয়ম, মুন্নু অ্যাগ্রো এবং বিডিল্যাপসের দর কমেছে তিন শতাংশ ছুঁই ছুঁই। আরও ১৪টি কোম্পানির শেয়ারদর ২ শতাংশের বেশি এবং ২২টি কোম্পানির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি।