নারী ও শিশুর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণে ১০ টি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আমরা একজোট।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত " নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আমরা একজোট " শীর্ষক জাতীয় মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানিয়েছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আমরা একজোট।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। সম্মানিত অতিথি বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক, অধিকার ও উন্নয়ন কর্মী খুশি কবির, বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি তাপতুন নাসরীন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নিবাহী পরিচালক শাহীন আনাম প্রমুখ। ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভাটি পরিচালনা করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
দাবি গুলোর মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশুর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা রোধে 'শূন্য সহিষ্ণুতা' ঘোষণা করা। যে সকল নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ।
দুই. নারী ও শিশুদের উত্ত্যক্ত করা যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধে মহামান্য হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ পৃথক পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করা। উপযুক্ত আইনসহ বিদ্যমান আইন ও বিধি-বিধান যথাযথ বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সু-নির্দিষ্ট দায়-দায়িত্ব প্রদানপূর্বক 'মনিটরিং সেল' গঠন করা।
তিন. নারীর মর্যাদাহানীকর সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে অনেক সময় বিভিন্ন কর্মসূচী বা অনুষ্ঠানের আগে বা পরে নারী বিদ্বেষী, নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এমন বক্তব্য প্রদানকারীদেরকে আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করা। চার. নারী ও শিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার মামলা দ্রুত নিস্পত্তি করতে হবে। নিকটস্থ থানা কর্তৃক মামলার বাদী/ভিকটিমের নিরাপত্তা বিধান করা।
পাচ. কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি, নির্যাতনসহ অনলাইন এবং সাইবার বুলিং এর শিকার হওয়া থেকে নারীদের নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে কার্যকর কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে হবে এবং সর্বসাধারণকে অবহিত ও সচেতন করা। ছয়. নীতি-নির্ধারণী সকল পর্যায়ে নারীর সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমকাজে সমান মজুরী নিশ্চিত করা।
সাত. নারী গৃহশ্রমিকসহ সকল নারী শ্রমিকের সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। তাদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং শ্রম আইনে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
আট. বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাল্য বিয়ে নিরোধ করার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে মেয়েদের জন্য শোভন কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা।
নয়. শিক্ষা, প্রযুক্তি, জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন এবং সব বয়সী নারীর সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। সকল প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে এবং আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে সেটি মনিটরিং করা।
দশ. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন কোন ধরনের নির্যাতন/ নিপীড়ন না হয় তার নিশ্চয়তা বিধান করা।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা শুধু একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নয়, এটি সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতির পথে বড় বাধা।
তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা, দ্রুত বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ও অভিযুক্তদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, নারীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় আমাদের পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ও রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর আইন প্রয়োগ ও প্রতিরোধমূলক শিক্ষা কর্মসূচি বিস্তারের ওপর জোর দেন।
খুশি কবির বলেন, ওয়াজ সবচেয়ে উস্কানিমূলক এবং ক্ষতিকারক। চিন্তার ক্ষেত্র পরিবর্তন করতে না পারলে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়তেই থাকবে।
নারী শিশুর প্রতি সহিংসতা জিরো টলারেন্সে থাকার প্রতি জোর দিয়েছেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।