রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

সাদা মাটির বৈচিত্র্যময় জনপদ সুসং দুর্গাপুর

সাদা মাটির বৈচিত্র্যময় জনপদ সুসং দুর্গাপুর

নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুর। আঁকাবাঁকা মেঠোপথ, সারিবদ্ধ ছোট-বড় পাহাড়-টিলা আর নদীর ছড়া বেষ্টিত এক বৈচিত্র্যময় জনপদ। ভারত সীমান্তের কূল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা নেত্রকোনার একটি উপজেলা। ২৭৯ দশমিক ২৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলায় আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রকৃতি আর সংস্কৃতির সংমিশ্রণে এক অপরূপ লীলাভূমি।

গারো পাহাড়ের স্তরে স্তরে লুকিয়ে আছে নানান রঙের চিনামটি, ঝরনার মতো বয়ে চলা সোমেশ্বরী নদীর জলধারা-সিলিকা বালির চরাচর, সুসং রাজবাড়ী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি, গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশন (জিবিসি), কমলা রানীর দিঘি, রানীখং মিশন, হাজং মাতা রাশিমণির স্মৃতিসৌধ, কমরেড মণি সিংহ স্মৃতিসৌধসহ নানা কিংবদন্তিতে সমৃদ্ধ এ জনপদ।

চিনামটির পাহাড়

দুর্গাপুরের কুল্লাগড়া ইউনিয়নে গারো পাহাড়ের অন্তর্গত একটি টিলা বেষ্টিত এলাকা বিজয়পুর। এর খুব কাছেই ভারতের সীমানায় রয়েছে সুউচ্চ গারো পাহাড়। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর ১৯৫৭ সালে ভেদিকুড়া স্থানে প্রথম সাদামাটির সন্ধান পায়। ওই সময়ে এক জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রশস্ত এই খনিজ অঞ্চলে প্রায় ২৪ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন সাদা মাটি রয়েছে। ১৯৬৮ সাল থেকে মাটি উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো থেকে ইজারা নিয়ে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাদা মাটি আহরণ করে। পরে ২০১৫ সালে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘বেলা’ মাটি আহরণের নামে আদিবাসীদের উচ্ছেদ এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে আদালতে মামলা দায়ের করে। আদালত ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ মাটি তোলার কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।

সাদা মাটি এলাকাটি এখন পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত। সেখানে কালো, খয়েরি, বেগুনি ও নীলসহ আরও কয়েক রঙের মাটির স্তর রয়েছে। বর্তমানে খনন কাজ বন্ধ থাকলেও আগে খনন করা এলাকাগুলোতে গেলে নানা রঙের মাটির স্তর এখনো সুস্পষ্ট দেখা যায়, যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। খনন করা এলাকাগুলো পরিণত হয়েছে নীল পানির লেকে। লেকগুলো অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সুদৃশ্য। প্রতিদিনই সেখানে দূর-দূরান্তের অগণিত পর্যটক ভিড় করেন। বিটিভিতে সম্প্রতি প্রচারিত বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ইত্যাদি এখানে ধারণ করা হয়। ২০২১ সালে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন প্রোডাক্ট বা জিআই পণ্য) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এ মাটি।

পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরী

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝরনাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সৃষ্টি। একসময় নদীটি সিমসাং নামে পরিচিত ছিল। ৬৮৬ বঙ্গাব্দের সোমেশ্বর পাঠক নামে এক সিদ্ধপুরুষ এ অঞ্চল দখল করে নেওয়ার পর থেকে নদীটি সোমেশ্বরী নামে পরিচিতি পায়। সর্পিলাকার নদীটি দুর্গাপর থেকে চৈতালি হাওর হয়ে জারিয়া, ঝাঞ্জাইল বাজারের পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিশেছে কংস নদে। নদীটির দৈর্ঘ প্রায় ১১৩ কিলোমিটার। গড় প্রস্থ ১১৪ মিটার। নদীর বিরিশিরি সেতুতে দাঁড়িয়ে উত্তর ও পূর্ব দিকে তাকালে চোখে পড়বে দূরে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে চলে গেছে গাড়ো পাহাড়ের সারি, যেন মিশে গেছে মেঘমালার সঙ্গে। সামনে সবুজের নিবিড় সমারোহ। সেই নিরিবিলি পাহাড়ি প্রকৃতির কোলজুড়ে ছোটা সোমেশ্বরীর রয়েছে কাচের মতো পরিষ্কার পানির ঐতিহ্য।

একসময় নদীতে সুস্বাদু দুর্লভ মহাশোল মাছের একমাত্র আবাস ছিল। এখন অবশ্য মহাশোল মাছ না পাওয়া গেলেও বর্ষাকালে বহু প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। নদীতে যখন পানি থাকে; তখন পর্যটকেরা নৌকায় করে গাড়ো পাহাড়ের কাছে ‘জিরো পয়েন্ট’ পর্যন্ত চলে যান। বর্ষাকালে পাহাড় থেকে নেমে আসা সোমেশ্বরীর ক্ষরস্রোতের সঙ্গে বহু শতবর্ষ ধরে বয়ে আনছে বালি, নুড়ি পাথর আর কয়লা। এসব এখানকার মানুষের জীবিকার উৎস্য। সিলিকা নামের এ বালি নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া সোমেশ্বরীর দিগন্ত জোড়া বালুর রাশি দেখে মনে হয়, এ যেন সমুদ্রসৈকত। তবে অপরিকল্পিত ভাবে শত শত অবৈধ বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলনের ফলে সোমশ্বরীর বর্তমান দশা দেখে মনে হয়, তাণ্ডব চলানো হয়েছে তার বুকে। অবশ্য অপরিকল্পিত ভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধসহ নদীটি রক্ষায় পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা আদালতে রিট করার পর প্রায় ছয় মাস ধরে বালু উত্তোলন বন্ধ আছে।

রানীখং মিশন

রানীখং মূলত একটি পাহাড়ি টিলার নাম। এর নামকরণের সঠিক ইতিহাসের উল্লেখ নেই কোথাও। তবে কথিত আছে, একসময় এই জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলটিতে ‘খং’ রানী নামে এক রাক্ষসীর বাস ছিল। গারো আদিবাসীরা তাকে পরাস্ত করে সেখানে জনবসতি গড়ে তোলেন। তাই এই রাক্ষসীর নাম অনুসারে জায়গাটির নামকরণ করা হয় রানীখং। তবে এই ধারণার পক্ষে কোনো যুক্তিযুক্ত প্রমাণ নেই। নামকরণ যেভাবেই হোক রানিখং এর রানী শব্দটি প্রয়োগ যথার্থ ও সার্থক।


রানীখং মিশন ও ক্যাথলিক গির্জা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৫ সালে। সমতল থেকে বেশ উঁচুতে টিলাটি। ঢালু পথ বেয়ে ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে হয়। টিলার দক্ষিণ দিকে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশদ্বার। একটু চোখে পড়বে সাধু সোসেফের মূর্তি। এ ছাড়া ধর্মপাল বিশপ হার্কসহ ৫ গারো হাজং আদিবাসীর মূর্তি সংবলিত একটি নান্দনিক ভাস্কর্য। ভাস্কর্যের ঠিক পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে আরেকটি মূর্তি যিশু খ্রিষ্টের। সেখান থেকে আর কয়েক পা হাঁটলেই বামপাশে শত বছরের প্রাচীন ক্যাথলিক গির্জা। পাঁচটি চূড়াসহ গির্জাটির স্থাপত্যশৈলী অনন্য। টিলার পূর্বপাশে দাঁড়িয়ে একটু নিচ দিকে তাকালে দেখা যায়, অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে এক জাহ্নবি জলধারা। এর নাম সোমেশ্বরী। উত্তরে তাকালে গারো পাহাড় ও ওপরের নীল আকাশকেও খুব কাছাকাছি মনে হয়।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি

সোমেশ্বরী নদীর দক্ষিণ কূল ঘেঁষে দুর্গাপুর উপজেলার ছোট একটি ইউনিয়নের নাম বিরিশিরি। যেখানে দাঁড়িয়ে আছে আদিবাসী গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতিচর্চায় এক অনন্য প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৭ সালে স্থাপিত হয়। স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি’। ২০১০ সালে নাম পরিবর্তন করে করা হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহে বসবাসরত গারো, হাজং, হদি, কোচ, বানাই, ডালুসহ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীগুলোর বিলুপ্তপ্রায় ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, নৃত্য-গীত প্রভৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, নিয়মিত চর্চা, বিভিন্ন উৎসব উদযাপন, বিকাশ, প্রকাশনা, অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রভৃতির মাধ্যমে জাতীয় সংস্কৃতির মূল স্রোতধারার সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।

গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশন

শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কের বিরিশিরি এলাকায় ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশন (জিবিসি)। গারো নামের জাতিগোষ্ঠীর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে গির্জা ছাড়াও রয়েছে পিসি নল মোমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, ব্ল্যাড ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

কমলা রানী দিঘি

বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রানী দিঘি। দিঘিটি সোমেশ্বরী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও এর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড় এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে। পাড়টিতে শতাধিক আদিবাসী পরিবার যুগ যুগ ধরে বসবাস করছে। জনশ্রুতি আছে, ১৫ শতকের শেষদিকে সুসং দুর্গাপুরের রাজা জানকি নাথ বিয়ে করেন কমলা দেবী নামে এক নারীকে। কমলা যেমনই রূপে-গুণে অনন্য ছিলেন; তেমনই ছিলেন পরম ধার্মিক। রাজা জানকি নাথও ছিলেন পরম প্রজাহিতৈষী। তাদের ছেলে রঘুনাথের জন্ম হলে প্রজাদের কল্যাণে পানির অভাব নিবারণের জন্য একটি পুকুর খনন করা হয়। কিন্তু পুকুরে আর পানি উঠলো না। এক রাতে রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হন, কমলা দেবী যদি পুকুরের মাঝখানে গিয়ে পূজো দেন, তাহলে পানি উঠবে। প্রজাহিতৈষী কমলা পূজোয় বসলে চারিদিক দিয়ে পানি উঠতে শুরু করলো। কমলা দেবী উঠে দাঁড়ালেন এবং করজোড়ে দেবতার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। পানি বেড়েই চললো। রাজা জানকি নাথ অস্থির হয়ে রাণীকে পাড়ে ভেড়ার জন্য চিৎকার শুরু করলেন। ততক্ষণে পানি রানীকে ডুবিয়ে ফেললো।

রানী আর পানি থেকে উঠে এলেন না। রাজা এ দৃশ্য দেখে বিচলিত হয়ে গেলেন। শিশু রঘুনাথ মাতৃদুগ্ধ ছাড়া আর কিছুই খায় না। এক রাতে রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হলেন। শিশুসন্তান রঘুকে পুকুরের পাড়ে রেখে এলে রানী কমলা দেবী তাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাজা কখনো রানীকে স্পর্শ করতে পারবেন না। রাজা গভীর রাতে সন্তানটিকে পুকুরের পাড়ে রেখে আসতেন আর রানী বুকের দুধ খাইয়ে আবার পানিতে চলে যেতেন। এ দৃশ্য রাজাকে খুব যন্ত্রণা দিতো। একদিন মধ্যরাতে যখন রানী কমলা দেবী তার সন্তানকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন; তখন কমলা দেবীকে ধরার জন্য রাজা জানকি নাথ এগিয়ে গেলেন। রাজাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন রানী। রাজা পরে রানীর চুলে ধরলেন কিন্তু রাখতে পারলেন না। রানী পানিতে নেমে পানির সাথে একাকার হয়ে গেলেন। এরপর থেকে আর শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে এলেন না। যতদূর জানা যায়, রাজা রঘুর আমলেই সুসং দুর্গাপুর শক্তিশালী পরগনা হিসেবে গণ্য হয়েছিল। এই রাজা রঘুই জঙ্গল বাড়ী দূর্গ আক্রমণ করেন এবং বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদ রায়, কেদার রায়কে পরাজিত করেন। পরে তিনি মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে মহারাজা উপাধি লাভ করেন।

জমিদার বাড়ি

দুর্গাপুর একসময় ছিল সুসং রাজ্যের রাজধানী। সোমেশ্বর পাঠক থেকে শুরু করে পরবর্তী বংশধররা প্রায় ৬৬৭ বছর ধরে এ রাজ্য শাসন করে। কিন্তু রাজকৃষ্ণ নামে এক রাজার শাসনামল থেকে রাজ পরিবারে রাজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত হয়। ফলে গোটা রাজ্য চারটি ভাগে ভাগ হয়ে যায় এবং চারটি পৃথক রাজবাড়ী প্রতিষ্ঠিত হয়। বাড়িগুলো হলো বড় বাড়ি, আবু বাড়ি, মধ্যম বাড়ি ও দু আনি বাড়ি। বর্তমানে এসবের ভগ্নাবশেষ আছে। দু আনি বাড়িতে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।


হাজং মাতা রাশিমণি স্মৃতিসৌধ

বহেরাতলী গ্রামের সড়কের পাশে ঐতিহাসিক টঙ্ক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত তীর-ধনুক আকৃতির স্মৃতিসৌধের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের আন্দোলন সংগ্রামের গৌরবময় অতীত সম্পর্কে জানান দেয়। সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বগাঝরা গ্রামটি ছিল ব্রিটিশ বিরোধী গ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেই গ্রামের একজন প্রতিবাদী মানুষ ছিলেন রাশিমণি। তিনি টঙ্ক প্রথা ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। ১৯৪৬ সালে বহেরাতলী গ্রামের কিশোরী কুমুদিনী হাজংকে ব্রিটিশ পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে কৃষক সমিতির বিপ্লবী সদস্য রাশিমণি তাঁকে উদ্ধার করতে হাতে থাকা দা দিয়ে পুলিশকে কোপাতে থাকেন। এতে এক পুলিশ সদস্যের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। কথিত আছে, কুমুদিনী হাজংকে বাঁচাতে যাওয়ার সময় তিনি সহযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘ময় তিমৗ, ময় জানি তিমৗদলৗ মান। ময় রক্ষা কুরিব না তে মরিবু। তুরা থাক তুমলৗ নীতি নিয়ৗ বুইয়ৗ থাক’। অর্থাৎ ‘আমি নারী, আমি জানি নারীর সম্ভ্রমের মান। নারীর মান আমি রক্ষা করবো, নয় মরবো। তোরা থাক তোদের নীতি নিয়ে বসে।’

টঙ্ক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ

সুসং জমিদার বাড়ির ভাগ্নে কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে জমিদারদের বিরুদ্ধে শুরু হয় টঙ্ক আন্দোলন। এই টঙ্ক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয় টঙ্ক আন্দোলন স্মৃতিসৌধ। দুর্গাপুর পৌর শহরে মহারাজা কুমুদ চন্দ্র মোমেরিয়াল (এমকেসিএম) পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের পাশেই স্মৃতিসৌধটি। প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মণি সিংহের মৃত্যু দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মেলা বসে এখানে।

ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংমিশ্রিত দুর্গাপুরে ভ্রমণের ইচ্ছা হলে ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাসে করে সরাসরি বিরিশিরি আসা যায়। অথবা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রাতে আন্তঃনগর ট্রেন হাওর এক্সপ্রেস, দুপুরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে করে নেত্রকোনা এসে সেখান থেকে সিএনজি বা মোটরসাইকেল বা ইজিবাইকে করে বিরিশিরি যাওয়া যায়। বিরিশিরি সেতু পার হলেই দুর্গাপুর। সেখান থেকে মোটরসাইকেল, ইঞ্জিনচালিত ইজিবাইক, রিকশায় করে এসব স্থানে ঘুরতে পারেন।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ