সুরা বাকারার ২৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। তাদেরকে যখনই ফলমূল খেতে দেয়া হবে, তখনই তারা বলবে, আমাদেরকে আগে জীবিকা হিসেবে যা দেয়া হতো, এ তো তারই মতো। একই রকম ফল তাদেরকে দেয়া হবে এবং সেখানে রয়েছে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিণীগণ, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে।
এ আয়াতে আল্লাহ সুসংবাদ দিয়েছেন, আখেরাতে ওই মুমিনরা চিরস্থায়ী জান্নাত লাভ করবে যারা নেক আমল করেছে। এ থেকে বোঝা যায় আখেরাতে শুধু ইমান যথেষ্ট হবে না। ইমানের সাথে জীবনযাপনে আল্লাহর আনুগত্য ও নেক আমল যুক্ত হওয়া অপরিহার্য। জান্নাতের নেয়ামত অপরিসীম এবং তার রিজিক অফুরন্ত। আল্লাহ এ আয়াতে ও জান্নাতের বর্ণনা সম্বলিত বিভিন্ন আয়াতে আমাদের বোধগম্য ভাষায় জান্নাতের নেয়ামতের কথা বর্ণনা করতে চেয়েছেন। মানুষের প্রবৃত্তি স্বভাবগতভাবে বস্তুর দিকে আকর্ষিত হয়। তাই আল্লাহ বস্তুগত নেয়ামতের কথাই বেশি বলেছেন। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা এক কথায় জান্নাতের নেয়ামতের বিবরণ দিয়ে বলেছেন, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে চিরস্থায়ী। (সুরা যুখরুফ: ৭১)
আখেরাতের দুনিয়ায় মানুষ মানুষই থাকবে, ফেরেশতা হয়ে যাবে না। তবে জান্নাতে মানুষের মানবীয় সত্ত্বা দুনিয়ার চেয়ে উন্নত হবে এবং সব রকম অস্বাভাবিকতা ও বিকৃতি থেকে মুক্ত থাকবে।
নেক আমল হলো, শরিয়ত, মানুষের সুস্থ স্বভাব ও বুদ্ধি অনুযায়ী সব কল্যাণকর কাজ। কিছু নেক আমলের কথা আল্লাহ সুরা মুমিনের শুরুতে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন, অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে, যারা নিজদের নামাজে বিনয়াবনত। যারা অসার কথা ও কাজ এড়িয়ে চলে। যারা জাকাত দানে সক্রিয়। যারা নিজেদের যৌনাঙ্গ হেফাজত করে; তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তাদের ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না। যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। আর যারা নিজদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকার রক্ষায় যত্নবান। যারা নিজেদের নামাজের ব্যাপারে যত্নবান। তারাই অধিকারী হবে ফিরদাউসের, যাতে তারা বসবাস করবে চিরকাল। (সুরা মুমিনুন: ১-১১)
মুমিনদের জান্নাতে চিরস্থায়ী হওয়া ও কাফেরদের জাহান্নামে চিরস্থায়ী হওয়ার অর্থ হলো তারা চিরকাল জান্নাত-জাহান্নামে থাকবে; কখনও বের হবে না। জান্নাত জাহান্নামও ধ্বংস হবে না। এটা এক চিরকালীন জীবন যার কোনো শেষ নেই।