গাছপালা ও উদ্ভিদ হলো আল্লাহ তাআলার অন্যতম মহান নেয়ামত। মানুষ ও প্রাণিকুলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গাছপালার ভূমিকাই সবচেয়ে বড়। অক্সিজেন সরবরাহ থেকে শুরু করে খাদ্য, ওষুধ, আশ্রয়, সাজসজ্জা ও জীবনের যাবতীয় প্রয়োজন মেটায় উদ্ভিদরাজি। প্রকৃতি, পরিবেশ ও মানবজীবন—সবকিছুরই ভারসাম্য রক্ষায় গাছের অবদান অপরিসীম।
কোরআনের আলোকে গাছপালার গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন- ‘পৃথিবীকে আমি বিস্তৃত করেছি এবং তাতে স্থাপন করেছি সুদৃঢ় পর্বতমালা এবং উৎপন্ন করেছি নয়নাভিরাম সব উদ্ভিদ। এসব রয়েছে প্রতিটি বিনীত বান্দার জন্য দৃষ্টান্ত ও উপদেশস্বরূপ।’ (সুরা কাফ: ৭–৮)
অন্য আয়াতে তিনি বলেন- ‘মানুষ যেন তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করে আমি কিভাবে পানি বর্ষণ করি, তারপর ভূমিকে বিদীর্ণ করে তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাকসবজি, জয়তুন, খেজুর, উদ্যানরাজি, ফলমূল ও পশুদের জন্য ঘাস। এগুলো তোমাদের ও গবাদিপশুর জীবনোপকরণ।’ (সুরা আবাসা: ২৪–৩২)
এই আয়াতগুলো স্পষ্টভাবে জানান দেয় যে, গাছপালা ও উদ্ভিদজগৎ আল্লাহর এক অপূর্ব সৃষ্টি, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ।
রাসুল (স.)-এর দৃষ্টিতে বৃক্ষরোপণ
রাসুলুল্লাহ (স.) বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন- ‘কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময়ও যদি কারও হাতে একটি চারা থাকে, তাহলে দাঁড়ানোর আগেই যেন তা রোপণ করে দেয়। (মুসনাদ আহমদ: ১৩০০৪; আদাবুল মুফরাদ: ৪৭৯)
এই হাদিস আমাদের শেখায়, গাছ লাগানো শুধু পরিবেশ রক্ষার কাজ নয়, বরং এটি এক মহান ইবাদত, যার প্রতিদান চলমান সওয়াব ‘সদকায়ে জারিয়া’।
বৃক্ষরোপণ: প্রবহমান সওয়াবের উসিলা
রাসুল (স.) ইরশাদ করেন- ‘মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তিনটি জিনিসের সওয়াব অব্যাহত থাকে: উপকারী ইলম, সদকায়ে জারিয়া ও নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম)
আর বৃক্ষরোপণ সদকায়ে জারিয়ার অন্যতম রূপ। ‘কোনো মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপণ করে বা ফসল চাষাবাদ করে, অতঃপর তা থেকে পাখি, মানুষ অথবা চতুষ্পদ প্রাণী কিছু খেয়ে নেয়, তাহলে তার জন্য সেটি সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (বুখারি: ২৩২০)
যে আমলকে লাল উটের চেয়ে মূল্যবান বলেছেন নবীজি (স.)
বিনা প্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন মারাত্মক গুনাহ
বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটাকে ইসলামে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘খোলা ময়দানের কুল গাছ, যার ছায়ায় পথচারী ও চতুস্পদ প্রাণী আশ্রয় নিয়ে থাকে তা কোনো ব্যক্তি নিজ মালিকানাহীন, অপ্রয়োজনে ও অন্যায়ভাবে কেটে ফেললে আল্লাহ তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (আবু দাউদ: ৫২৩৯)
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘যখন সে নেতৃত্ব পায়, তখন পৃথিবীতে ফিতনা সৃষ্টি করে, শস্য ও প্রাণী ধ্বংস করে; আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না।’ (সুরা বাকারা: ২০৫)
এ আয়াত ও হাদিসগুলো গাছ নিধনের বিরুদ্ধে শক্ত বার্তা বহন করে। তাই পরিবেশ ও মানবতা রক্ষায় বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি বৃক্ষ সংরক্ষণও অপরিহার্য।
গাছ হোক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ
প্রিয় পাঠক, গাছ কেবল জীবনের সৌন্দর্য নয়, এটি জীবন রক্ষার অনন্য উপকরণ। ইসলাম শুধু বৃক্ষরোপণকে উৎসাহ দেয়নি, বরং এটিকে সদকায়ে জারিয়ার উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেছে। আসুন, আমরা সবাই প্রত্যেকে অন্তত একটি করে ফলজ, ছায়াদানকারী বা উপকারী গাছ লাগাই এবং তা সংরক্ষণের দায়িত্বও গ্রহণ করি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রকৃতির এই নেয়ামতের কদর করতে এবং বেশি বেশি গাছ লাগানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।