শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ঢাকার আকাশে তীব্র ঝাঁকুনির শিকার বিমান, হাত ভাঙল কেবিন ক্রুর

ঢাকার আকাশে তীব্র ঝাঁকুনির শিকার বিমান, হাত ভাঙল কেবিন ক্রুর

ঢাকার আকাশে টার্বুলেন্সের শিকার হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ। ৯ সেকেন্ড ধরে স্থায়ী সেই টার্বুলেন্সের তীব্র ঝাঁকুনিতে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙেছে এক কেবিন ক্রুর। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ালেও তারা নিরাপদে ছিলেন।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার কিছু সময় পর বিমানের বিজি ১২৮ ফ্লাইটে এই ঘটনা ঘটে। বোয়িং ৭৩৭ মডেলের উড়োজাহাজটি দুবাই থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় ফিরছিল।

ওই ফ্লাইটের যাত্রী ও বিমানকর্মী সূত্রে জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদ অবতরণের পর দুর্ঘটনার শিকার কেবিন ক্রু শাবামা আজমী মিথিলাকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) নিয়ে যাওয়া হয়।

এক্সরে পরীক্ষায় দেখা গেছে, তার বাম হাতের কনুইয়ের ওপরের (বাহু) হাড় ভেঙে অনেকটা আলাদা হয়ে গেছে।

এর আগে শুক্রবার সকালে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের বিজি-১২৮ ফ্লাইটটি দুবাই থেকে চট্টগ্রামে অবতরণ করে। সেখানে যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর ঢাকার যাত্রী ও অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের নিয়ে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কেবিন ক্রুরা যাত্রীদের প্রাথমিক সার্ভিস করার মধ্যেই উড়োজাহাজটি ততক্ষণে ঢাকার আকাশে চলে আসে। তখনই উড়োজাহাজে তীব্র ঝাঁকুনি শুরু হয়। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই যাত্রীরা আতঙ্কে কান্না-চিৎকার শুরু করেন। টার্বুলেন্সের মধ্যে পড়ে অন্তত ৯ সেকেন্ড ধরে উড়োজাহাজটি এলোমেলোভাবে ঝাঁকুনি দিতে থাকে।

ওই ফ্লাইটটির পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন ইন্তেখাব হোসাইন। তিনি বিমানের ডেপুটি চিফ অব ফ্লাইট সেফটি পদেও রয়েছেন। ফ্লাইটে ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ফ্লাইট পার্সার রনি। ফ্লাইট স্টুয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন মিথিলা।

মিথিলার এক সহকর্মী জানান, মিথিলা তখন যাত্রী সার্ভিস শেষ করে উড়োজাহাজের পেছনের দিকে দাঁড়িয়েছিলেন, অপর সহকর্মী নিজ আসনে বসা ছিলেন। তখনই টার্বুলেন্সের শিকার হয় সেটি। এতে মিথিলা গ্যালির ফ্লোরে পড়ে যান।

মিথিলার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, চিকিৎসকরা মিথিলার স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং অঙ্গহানির আশঙ্কা করলেও শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়ায় পঙ্গু হাসপাতালে তার জরুরি অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। হাতে প্লাস্টার করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ফ্লাইট অবতরণের পর চালকের অনুপস্থিতির কারণে অ্যাম্বুলেন্স ডেকেও পাওয়া যায়নি, শুক্রবার হওয়ায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির মেডিকেল সেন্টারও বন্ধ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে অন্য কেবিন ক্রুদের মধ্যে।

অবশ্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম জানিয়েছেন, মিথিলা আবুধাবি ফ্লাইটে ফেরার পথে টার্বুলেন্সে পড়ে গুরুতর আহত হন। বিমানবন্দর থেকে তাকে সরাসরি পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

আহত কেবিন ক্রুর চিকিৎসার বিষয়ে জানতে বিমান মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার তাসলিমা আখতারকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

মাঝেমধ্যেই উড়োজাহাজ টার্বুলেন্সের শিকার হওয়ার খবর পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে ঝাঁকুনির খবর মিললেও এবারই প্রথম ঢাকার আকাশে বড় ধরনের এই টার্বুলেন্স দুর্ঘটনায় পড়ল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি। এর আগে গত বছরের মে মাসে মাঝ আকাশে মারাত্মক টার্বুলেন্সের শিকার হয়ে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের এক যাত্রীর মৃত্যু ও বেশ কয়েকজন আহত হন। তখন বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়।

এভিয়েশনের ভাষায় দুই বিপরীতমুখী বাতাসের সংঘর্ষের কারণে তৈরি হওয়া বায়ুর এক ধরনের অনিয়মিত প্রবাহকে টার্বুলেন্স বলা হয়। বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহের এই ধাক্কাধাক্কির মধ্যে উড়োজাহাজ এসে পড়লেই এক বা একাধিক মারাত্মক ঝাঁকুনি লাগতে পারে। উড়োজাহাজে গতিবিধি ও উচ্চতায় আকস্মিক পরিবর্তনের পাশাপাশি এক ধাক্কায় উড়োজাহাজ কয়েক হাজার ফুট নীচে নেমে যেতে পারে। বাতাসের চাপ খুব বেশি থাকলেও উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। কোনো সংকেত ছাড়াই এমনটা ঘটার কারণে সাধারণত পাইলটদের কিছু করারও থাকে না। এই টার্বুলেন্সের সময় যাত্রীদের সিটবেল্ট না থাকলে হতাহতের মতো ঘটনা ঘটে।


সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ