সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

টিউলিপে রঙিন তেঁতুলিয়া

টিউলিপে রঙিন তেঁতুলিয়া

হিমালয় কন্যা খ্যাত দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। আর এই পঞ্চগড়ের সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গা তেতুলিয়া রঙিন হয়েছে নেদারল্যান্ডসের ফুল টিউলিপে। ১৯ প্রজাতির টিউলিপের ছেয়ে গেছে বাগান। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা হাজার হাজার পর্যটক।

স্থানীয় নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে ২০ জনকে টিউলিপ চাষের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। গত তিন বছর ধরে এই নারীরাই টিউলিপ চাষ করে সফল হয়েছেন। এবার এই এলাকার ১৬ জন নারী চাষ করছেন টিউলিপ। জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্তের দর্জিপাড়া গ্রামে দুই ধাপে সফলতার পর তৃতীয়বারের মতো আবারও চাষ হয়েছে টিউলিপ। রঙিন এ ফুল দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানা বয়সের হাজারও দর্শনার্থী। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

বিভিন্ন দেশে দেড়শ'রও বেশি প্রজাতির টিউলিপ চাষ হয়। এর মধ্যে ১৯ প্রজাতির ২৫ হাজার বীজ বোনা হয়েছে দর্জীপাড়া গ্রামে। গত বছর লাভ হওয়ায় তেঁতুলিয়ার মাটিতে এবারও নতুন করে চাষ করেছেন উদ্যোক্তারা। এতে করে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি অর্থনৈতিক আয়ে ঘুরেছে তাদের সংসারের চাকা। টিউলিপের বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করে দেশ-বিদেশের হাজারও পর্যটক।

শীতকালে বাংলাদেশে এই ফুলের চাষের সম্ভাবনার কথা আগে জানা গেলেও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া শুরু হয় ২০২২ সালে। এবারও টিউলিপ চাষের এই প্রকল্পটিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন। এখন প্রতিদিনই ফুটছে নতুন নতুন ফুল। এ ফুল ঘিরে নারী কৃষাণীদের আয়ের স্বপ্ন তৈরি হয়েছে। টিউলিপ ফুলের পর অন্য সময়টাতেও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষাবাদ করতে পারবেন তারা।

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে রাঙিয়েছে আমাদের টিউলিপ। সামনে ২১ ফেব্রুয়ারি মহান মাতৃভাষা দিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস রয়েছে। এ ফুল মুগ্ধ করবে যেকোনো পর্যটকদের। সাধারনত দিনের বেলা ১৫ ডিগ্রি এবং রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনশীল এই টিউলিপ।

তেঁতুলিয়ার সারিয়ালজোত এলাকার টিউলিপ ফুলচাষি মনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের অল্প জমি আছে। সেই জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। পরে ইএসডিও অফিস থেকে আমাদের টিউলিপ ফুলের বীজ, সার দিয়ে সহযোগিতা করলে তৃতীয় বারের মতো চাষ করি। বীজ বপনের কয়েক দিনের মাথায় বাগানে ফুল ফোটা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ বাগানে এসে ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

সীমান্ত গ্রাম দর্জিপাড়া এলাকার আরেক ফুলচাষি মুক্তা বেগম বলেন, আমরা কয়েকজন নারী মিলে এ অঞ্চলে নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ ফুটিয়ে ছিলাম। এ অঞ্চলে টিউলিপ চাষ করে আমরা যেমন সফল হয়েছি তেমনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি। এছাড়া টিউলিপ ফুল দেখতে এ অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটে। আশা করছি এবারও টিউলিপের দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য ও হাসিতে মুগ্ধ করবে।

টিউলিপ বাগান দেখতে আসা দিনাজপুরের জান্নাতুন রহমান জেমি বলেন, মোবাইলে অনেকবার দেখেছি এই ফুল। এবার প্রথম তেঁতুলিয়ায় এসে সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য হলো।  

তেঁতুলিয়ার খয়খাটপাড়া এলাকার সাকিল আহমেদ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ফুলের ছবি দেখে আসছি। অবশেষে বান্ধবীদের সঙ্গে প্ল্যান করে আজ এই ফুল দেখা হলো। খুব ভালো লাগছে ভিনদেশি এমন ফুল নিজ এলাকায় দেখতে পেয়ে।

এদিকে, পরিবার পরিজন নিয়ে টিউলিপের মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। ফুল দেখতে আসা সবাই বলছেন, টিউলিপের বাহারি রঙে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। তেঁতুলিয়ায় নানা অনুসঙ্গের সঙ্গে টিউলিপ বাগান ভ্রমণ আনন্দকে আরও আকর্ষণীয় ও মুগ্ধকর করে তুলেছে। সাধারণত এই ফুল দেখতে বিদেশে ছুটে যায় দেশের মানুষ। তবে নিজ দেশের মাটিতে এই ফুল চাষ হওয়ায় অনেককে বিদেশের পরিবর্তে উত্তরের এ জনপদ টানছে।

ইএসডিওর পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার বলেন, আমরা খুব আনন্দিত যে তৃতীয়বারের মতো তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ায় টিউলিপ চাষ করতে পেরেছি। নারী ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে আমরা এ অঞ্চলের প্রান্তিক নারীদের সহযোগিতায় এ বছরও টিউলিপ চাষ করেছি। আজ বাগান উদ্বোধন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, তিন বছর ধরে শীতের শেষের দিকে এখানে বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে টিউলিপ ফুল চাষ করা হচ্ছে। ভিনদেশি এবং বাহারি রঙের এ টিউলিপ বাগান এখন সম্ভাবনাময় তেঁতুলিয়ার পর্যটনে নতুন সংযোগ বলে মনে করা হচ্ছে।

Courtesy: Dhaka Mail

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন