ইসলাম মানুষকে পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদা দিতে শিক্ষা দেয়। তাই কাউকে বিকৃত বা ব্যঙ্গাত্মক নামে ডাকা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এটি কেবল অন্যের মানসিক কষ্টের কারণই নয়, বরং কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে ‘কবিরা গুনাহ’ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
কোরআনের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদাররা! কোনো সম্প্রদায় যেন অন্য সম্প্রদায়কে উপহাস না করে; হতে পারে, উপহাসের পাত্ররাই তাদের চেয়ে উত্তম... আর তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অত্যন্ত নিকৃষ্ট। আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম। ’ (সুরা হুজরাত: ১১)
এই আয়াত প্রমাণ করে, অন্যকে অপমানজনক নামে ডাকা বা উপহাস করা আল্লাহর কাছে জালিমের কাজের অন্তর্ভুক্ত।
আরও পড়ুন: মানুষের সম্মান রক্ষার ফজিলত
অহংকার ও উপহাস—একই রোগের দুটি রূপ
মানুষ সাধারণত তখনই উপহাস করে, যখন নিজেকে উত্তম মনে করে। অথচ কে প্রকৃত অর্থে উত্তম, তা কেবল আল্লাহই জানেন। তাই অহংকার ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য ঈমানের পরিপন্থী।
হাদিসে কঠোর সতর্কবার্তা
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সে-ই প্রকৃত মুসলিম, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ।’ (তিরমিজি: ২৬২৭)
তিনি আরও বলেছেন, ‘উপহাসকারীর জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে, বলা হবে ‘এসো’; কিন্তু যখন সে প্রবেশ করতে চাইবে, তখন দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।’ (কানজুল উম্মাল: ৮৩২৮)
এ হাদিসগুলো উপহাসের ভয়াবহ পরিণতি স্পষ্ট করে দেয়।
ডিজিটাল যুগে উপহাসের রূপ
আগে নাম বিকৃত করা সীমিত থাকত বন্ধু বা সহপাঠীদের মাঝে। এখন ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে তা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। কারও নাম বিকৃত করে মিম বা ট্রল করা শুধু অন্যের মানহানি নয়, নিজের আমলও ধ্বংসের কারণ।
আরও পড়ুন: মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করার সওয়াব
ইসলামি দৃষ্টিতে নৈতিক দায়িত্ব
ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, অন্যের মনঃকষ্টের কারণ হয়—এমন কোনো কথা বলা বা কাজ করা হারাম। অন্যকে তুচ্ছ করা, উপহাস করা বা বিকৃত নামে ডাকা গিবতের মতোই ভয়াবহ গুনাহ। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষকে সম্মান করা ও তার অনুপস্থিতিতে মান রক্ষা করা জাহান্নাম থেকে রক্ষার উপায়।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে তার ভাইয়ের সম্মান অনুপস্থিতিতে রক্ষা করে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার মুখ আগুন থেকে রক্ষা করবেন।’ (তিরমিজি: ১৯৩১) আরও বলেন, ‘যে মানুষের জন্য সবচেয়ে উপকারী, সে-ই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।’ (আততারগিব: ২৬২৩)
অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, প্রকৃত নামে ডাকা ও শালীন আচরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। বিকৃত নামে ডাকা, ব্যঙ্গ করা বা অপমান করা আল্লাহর ক্রোধ ডেকে আনে। তাই আমাদের উচিত জিহ্বাকে সংযত রাখা এবং অন্যের মর্যাদা রক্ষা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জিহ্বার গুনাহ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।