❏ ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা ❏ সদরঘাট, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী ও কমলাপুরে বাড়ছে যাত্রীদের চাপ
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পরিবার পরিজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দভাগ করে নিতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে রাজধানীবাসী। কর্মদিবস আছে আর মাত্র দুইদিন। অনেকেই কর্মস্থলে দুইদিন ছুটি নিয়ে শুক্রবারই ছুটেছেন গ্রামের উদ্দেশ্যে। এরফলে ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা। শুক্রবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেল স্টেশন ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ট্রেন যাত্রায় স্বস্তির কথা জানালেও সড়কপথে যানবাহনের সংকট বলে দাবি করেছেন যাত্রীরা। কোথাও কোথাও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের ভিড় বাড়ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদরঘাটে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। শুক্রবার দুপুরে সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে যাত্রীদের পরিবার-পরিজন ও মালামাল নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায়। পন্টুনে ভেড়ানো বেশির ভাগ লঞ্চের ডেক যাত্রীতে পূর্ণ ছিল। ভোর পাঁচটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ঢাকা নদীবন্দর থেকে ২৭টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন গন্তব্য থেকে সদরঘাটে ফিরেছে ৩৮টি লঞ্চ।
ঢাকা-বরগুনা নৌপথে চলাচলকারী এমভি পূবালী-১ লঞ্চের কর্মচারী সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। কিন্তু বেলা দুইটার মধ্যে লঞ্চের ডেক যাত্রীতে ভরে গেছে।’ পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় যাওয়া এমভি জামাল-৮ লঞ্চের কর্মচারী মো. হাবিব বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা ছয়টায়। দুপুর থেকে যাত্রীরা লঞ্চে উঠতে শুরু করেছেন। যাত্রী হলেই লঞ্চ টার্মিনাল ছেড়ে যাবে।’
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে কথা হয় যশোরগামী মামুন হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে এসেছি বাসস্ট্যান্ডে। অগ্রিম টিকিট করার কোনো সুযোগ আমরা পাই না। এখনো কোনো গাড়ি পাইনি। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। সুযোগ পেয়ে একটু আগেভাগেই বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়েছি। যাতে একটু ভোগান্তি কম হয়। সবে মানুষ গ্রামে যাওয়া শুরু করেছেন এজন্য যানবাহন তেমন একটা সড়কে নেই।
সায়েদাবাদে হানিফ কাউন্টারের কাউন্টার ম্যানেজার হাবিব বলেন, আমাদের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। অনেকেই আসছেন গাড়ির জন্য। তবে সিট না থাকায় ফিরে যাচ্ছেন।
সরকার-নির্ধারিত ভাড়া থেকে কম মূল্যে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন দূরপাল্লার পরিবহনের টিকিট বিক্রেতারা। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, আগের তুলনায় বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বেশি দামে টিকিট বিক্রির বিষয়টি কাউন্টারের কর্মচারীরা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছু টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। তবে বিটিআরসির নির্ধারিত ভাড়া থেকে কম নেয়া হচ্ছে।
রফিকুল ইসলাম নামের এক টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রী বলেন, আমার খুলনাতে। টিকিট পাওয়া যাচ্ছে, তবে ভাড়া বেশি দাবি করছে কাউন্টারগুলো। এখন ফেরি ঘাটেও সেরকম জ্যাম নেই। তারপরও ভাড়া বেশি চাওয়া হচ্ছে। অন্যান্য সময় আমরা সাড়ে ৬শ টাকায় গেলেও ঈদ আসলেই বাস ভাড়া বেড়ে যায়। তারপরও তো আমাদের বাধ্য হয়ে যেতে হয়। ঈদযাত্রার এই সময়ে টার্মিনাল থেকে বাস বের হওয়ার পর রাস্তায় যাত্রী ওঠানো নামানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ।
এদিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের মধ্যে ছিলো স্বস্তির ছাপ। ভোগান্তি ছাড়া বাড়ি ফিরতে পারায় ট্রেন যাত্রীরা ছিলেন উচ্ছ্বসিত। দুই একটি ট্রেন কয়েক মিনিট বিলম্ব হলেও সেটাও মানিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীরা। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, এবারের ঈদ যাত্রায় এখন পর্যন্ত কোনো শিডিউল বিপর্যয় কিংবা ট্রেন বিলম্বের ঘটনা ঘটেনি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২০টি ট্রেন যথাসময়ে সকল ছেড়ে গেছে। আজকে আন্তঃনগর ৪২ ও লোকাল-কমিউটার ২৫টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টেশনে ঈদ যাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি ফিরতে কমলাপুর স্টেশনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অবস্থান করছেন অনেকে। প্ল্যাটফর্মে দুপুরের দিকে কয়েক জোড়া ট্রেন অপেক্ষা করছে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার জন্য। এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রার ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় না থাকায় অভিযোগ নেই যাত্রীদের। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসছে সব ট্রেন। সব মিলিয়ে এবারের ঈদ যাত্রায় এখনো ট্রেন নিয়ে অভিযোগ নেই যাত্রীদের।
রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী সোহেল রহমান বলেন, এবার অনলাইনে টিকিটি থাকায় লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা পোহাতে হয়নি। ঈদে বাড়ি যাচ্ছি ঝামেলা ছাড়াই। ট্রেন ৫-১০ মিনিট লেট করে ছাড়লেও এটা বিষয় না। বাসেও এমন ১০ মিনিট লেট হয়।
৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন : অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে শুক্রবার থেকে সারাদেশে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার।
জানা গেছে, ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (১ ও ৩) চট্টগ্রাম-চাঁদপুর; চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (২ ও ৪) চাঁদপুর-চট্টগ্রাম; ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল (৫ ও ৬) চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম; দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (৭ ও ৮) ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে ৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এবং ঈদের পরে ৫ দিন চালানো হবে। এছাড়াও কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল (৯ ও ১০) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ঈদের আগে (৮ ও ৯) এপ্রিল ও ঈদের পরের দিন থেকে তিন দিন চলাচল করবে।