কোরবানি ইসলামি শরিয়তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে কারো কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। এই সময়ে পরিবারের একাধিক সদস্য যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন, তাদের প্রত্যেকের ওপর আলাদাভাবে কোরবানি ওয়াজিব। নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা থাকে অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব সম্পদ মিলে সাড়ে ৫২ ভরি রুপার সমমূল্যের হয়, তখনো কোরবানি করা ওয়াজিব। সরাসরি স্বর্ণ বা রুপা থাকা শর্ত নয়, বরং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সমমূল্যের নগদ অর্থ বা বাড়ি বা ব্যাবসায়িক পণ্য বা অন্যান্য আসবাবপত্রের মালিক হবে। (তাবয়িনুল হাকায়িক, পৃষ্ঠা: ১০, খণ্ড: ৬)।
অথচ আমাদের সমাজে অনেক পরিবারেই দেখা যায়, একাধিক সদস্য নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও শুধু কর্তার নামেই কোরবানি করা হয়। এটি ভুল পদ্ধতি। এতে সবার ওয়াজিব কোরবানি আদায় হবে না। আপনার ফরজ নামাজ অন্যকেউ পড়লে যেমন আপনারটা আদায় হবে না, তদ্রুপ আপনার ওয়াজিব কোরবানি ততক্ষণ আদায় হবে না, যতক্ষণ নিজেও কোরবানি করছেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, কোনো ব্যক্তি কারও বোঝা নিজে বহন করবে না। (সুরা নাজম: ৩৮)।
হ্যাঁ, এমন হতে পারে যে, যৌথ পরিবারে যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তারা প্রত্যেকে মিলে একটি কোরবানির পশু কিনল এবং এতে সবাই অংশ নিল। তাতে বাহ্যিকভাবে গরু একটি হলেও যেহেতু প্রতিজনের ভাগেই অন্তত এক ভাগ পড়ছে, তাই সবার ওয়াজিব কোরবানি আদায় হয়ে যাবে। অথবা কোরবানির পশু কিনল একজন। আর বাকিদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে উক্ত কোরবানি বাকিদের পক্ষ থেকে কোরবানি করে দিলে সবার কোরবানি আদায় হবে। বাকিদের জানিয়ে তাদের অনুমতিক্রমে তাদের পক্ষ থেকে কোরবানির নিয়তে জবাই না করলে বাকিদের কোরবানি আদায় হবে না। এভাবে শরিয়তের নিয়ম মেনে কোরবানি করা জরুরি। কোনোভাবেই যেন এমন না হয় যে, ওয়াজিব বিধান লঙ্ঘন করে বসে আছেন। নবীজি বলেছেন, যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৩৫১৯; আত তারগিব: ২/১৫৫)