যাপিত জীবনে নাগরিক ক্লান্তির মধ্যে আষাঢ় আসে। শহরের অলিগলি তে বৃষ্টির পরশ নাগরিক জীবনে কিছুটা শান্তির পরশ দেয়। কোলাহল পূর্ণ এই সময়ে শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বাংলা আমারের সহযোগিতায় আয়োজন করা হয় আবৃত্তি ও গানের যুগল সম্মিলন "বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দ ধারা "। এতে আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করেন নন্দিত আবৃত্তিশিল্পী ও সংগঠক সুকান্ত গুপ্ত এবং সংগীতশিল্পী ও শিক্ষক সামিয়া আহসান।
আবৃত্তিশিল্পী মাসকুরে সাত্তার কল্লোলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা আমার এর সভাপতি মেহেদী হাসান আকাশ।
উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। আষাঢ়ের রক্তিম গোধূলি বেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ হতে আবৃত্তির মাধ্যমে আয়োজন শুরু হয়।
বর্ষার দিনে কবিতা আর গানের যুগল সম্মিলনে আষাঢ়ের মেঘময় সন্ধ্যায় বর্ষার স্নিগ্ধতা ছড়ায়।শিল্পীবৃন্দ একে একে পরিবেশন করেন পঞ্চকবি এবং সমসাময়িক কবিদের আবৃত্তি ও গান। হলভর্তি শ্রোতাদের পিনপতন নীরবতায় নন্দিত আবৃত্তিশিল্পী সুকান্ত গুপ্ত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ, প্রশ্ন, মনে থাকবে,সন্ধ্যা ও প্রভাত, বিদায়, বনলতা সেন, বিদায় বেলায়, এ কেমন ভ্রান্তি আমার, অনন্তপ্রেম সহ আরো বেশকিছু কবিতার আবৃত্তি। সংগীতশিল্পী সামিয়া আহসান পরিবেশন করেন আপনারে দিয়ে রচিলি রে কি,জগতে আনন্দযজ্ঞে,সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে,দেখ মা এবার দুয়ার খুলে,জানি জানি কোন আদিকাল হতে সহ আরো বেশ কিছু পঞ্চকবির গান। শিল্পীবৃন্দের আবৃত্তি ও গানের যুগল সম্মিলনে পর পর পরিবেশনা সকলকে মুগ্ধ করে। যন্ত্রসংগীত অনুষঙ্গে ছিলেন অসিত বিশ্বাস, দেবা পাল,রবীন্দ্রনাথ পাল।
আবৃত্তি আর গানের যুগল সম্মিলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদক প্রাপ্ত গুণীজন বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ সভাপতি ঝুনা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী এবং সংগঠক আহকাম উল্লাহ,
এনামুল হাবিব অতিরিক্ত সচিব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, প্রমুখ।
উল্লেখ্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুন্দরী শ্রীভূমির সুকান্ত গুপ্ত, আবৃত্তিশিল্পী ও সংগঠক। ছোটবেলা হতে আবৃত্তি সংগীত সহ নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত। আবৃত্তিকে গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশ এবং দেশের বাইরে নানা জায়গায়। নন্দিত হয়েছেন। অল্প সময়ে অর্জন করেছেন মানুষের অকুণ্ঠ ভালবাসা ও সম্মান। সংবাদপাঠক হিসেবে বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রে যুক্ত আছেন দীর্ঘ সময় ধরে। বাংলাদেশ বেতার এবং টেলিভিশনের আবৃত্তি করছেন নিয়মিত। প্রকাশিত হয়েছে তার নয়টি আবৃত্তি অ্যালবাম। সঞ্চালনা করছেন বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্র সহ স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ নানা আয়োজনে। দেশ এবং দেশের বাইরে আবৃত্তি নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে চলছেন। কণ্ঠ দিয়েছেন বেশকিছু বিজ্ঞাপন চিত্রে। তার প্রযোজনা এবং নির্দেশনায় বেশকিছু আবৃত্তি প্রযোজনা দেশ এবং দেশের বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। সুকান্ত এখন বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের নির্বাহী সদস্য, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সহ অনেক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।তাঁর সম্পাদনায় সাহিত্যের ছোট কাগজ শ্রুতির প্রায় বিশটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদনা করেছেন শিশু কিশোর ত্রৈমাসিক অন্তঃ। স্থানীয় এবং জাতীয় দৈনিকে লেখে যাচ্ছেন নিয়মিত। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর তিনটি উপন্যাস সুকান্ত তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৫ সালে পেয়েছেন জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যায়ার্ড সহ নানা সাংগঠনিক সম্মাননা। আবৃত্তি কে গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন সুকান্ত। এ বছর বাংলা আমার প্রণোদনা ২৪ পেয়েছেন আবৃত্তিশিল্পী এবং সংগঠক সুকান্ত গুপ্ত।
সামিয়া আহসান,পেশাগত জীবনে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা।ছোটবেলা থেকেই গানের হাতেখড়ি আব্বাসউদ্দীন একাডেমিতে গান শেখার মাধ্যমে। ২০০৬ সালে ছায়ানটে শ্রদ্ধেয় অনুপ বড়ুয়া স্যারের কাছে আবার শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেয়া শুরু করেন তিনি। ছায়ানটে রবীন্দ্র সংগীত বিভাগ থেকে সফলভাবে ৬ বছরের কোর্স সম্পন্ন করে প্রথম মান পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এর মাঝে তিনি প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী প্রয়াত মিতা হকের তত্ত্বাবধানে তাঁর প্রতিষ্ঠান সুরতীর্থে শিক্ষালাভ করেছেন। তিনি ছায়ানটে শিক্ষক সহযোগী হিসেবে যুক্ত আছেন,সেই সাথে বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবেও যুক্ত আছেন। শিল্পীবৃন্দকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।