কাঠগোলাপ একটি আলোচিত ফুল। কাঠগোলাপ নাম শুনলেই মনে হয়, কাঠ দিয়ে তৈরি গোলাপ ফুল। আর গোলাপ নাম শুনলেই চোখে ভাসে কাঁটাযুক্ত গাছে রক্তিম ভালোবাসায় সিক্ত পাঁপড়িগুচ্ছ। কিন্তু লাল পাঁপড়ি ও কাঁটা ছাড়াও সুবিশাল উঁচু গাছেও ধরে গোলাপ। তারই নাম কাঠগোলাপ। গোলাপের সঙ্গে ফুলটির কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও ফুলটিকে কাঠগোলাপ নামেই চেনে সবাই।
এ গাছ সারাবছর পাতাহীন থাকে। বর্ষার ছোঁয়ায় গাছ যেন প্রাণ ফিরে পায়। সবুজ পাতা ও সাদার ওপর লাল ফুলের ছোঁয়ায় সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এর ফুল নানা রঙের হয়। কোনোটি দেখতে ধবধবে সাদা, কোনোটি সাদা পাঁপড়ির ওপর হলুদ দাগ, আবার কোনোটি লালচে গোলাপি রঙের। দূরে বা কাছ থেকে এসব বাহারি কাঠগোলাপ সহজেই নজর কাড়ে। কাঠগোলাপের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে ফটোসেশন করতেও দেখা যায়।
কাঠগোলাপ মূলত প্রশান্ত মহাসাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ফুল। কাঠগোলাপের ইংরেজি নাম Frangipani. পরিবার Apocynaceae এবং Plumeria বর্গের সদস্য। এটি মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল, ভেনিজুয়েলা ও দক্ষিণ ভারত হয়ে এ দেশে থিতু হয়েছে। উদ্ভিদটির আছে অসংখ্য প্রজাতি। প্রজাতিভেদে গাছের উচ্চতা ৮-১০ ফুট হতে পারে। গাছের পাতার গড়নও বিচিত্র। প্লুমেরিয়া রুব্রার পাতার কিনারা সুচালো, প্লুমেরিয়া অবটুজার পাতা গোলাকার ও প্লুমেরিয়া পুডিকার পাতা চামচ আকৃতির।
কাঠগোলাপ গাছে সারাবছর ফুল ফোটে। তবে গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎকালে গাছ ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। অঞ্চলভেদে এ ফুল কাঠচাঁপা, গুলাচিচাঁপা, গোলকচাঁপা, চালতাগোলাপ, গরুড়চাঁপা, গুলাচ, গোলাইচ, চালতাগোলাপ ইত্যাদি নামে পরিচিত। কাঠগোলাপ গাছে অল্প-বিস্তর ভেষজ গুণাগুণ আছে।
কাটিং, অঙ্গজ প্রজনন ও বীজ থেকে এই গাছের বংশবিস্তার হয়। মার্চ-এপ্রিল মাসে কাঠগোলাপ গাছ লাগানোর উত্তম সময়। গাছ রোপণের জন্য উঁচু জায়গা নির্বাচন করতে হয়। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ও পানির প্রয়োজন হয়। বসতবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাগান এবং বাড়ির ছাদের টবে কাঠগোলাপ গাছ রোপণ করা যায়।
কাছের নার্সারি থেকে কিনে টবে লাগাতে পারেন। আবার বীজ থেকে বা কাণ্ড কেটেও নতুন গাছ লাগানো যায়। এই গ্রীষ্ম-বর্ষায় কাঠগোলাপ তার মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। তাই হাজারো কাঠগোলাপ যেন মানুষের মনে কড়া নাড়ছে। এ যেন সৌন্দর্যের এক অনন্য রূপ।