সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

‘মঙ্গলবাড়িয়া’ লিচু চাষে স্বপ্ন বুনছে শত শত পরিবার

‘মঙ্গলবাড়িয়া’ লিচু চাষে স্বপ্ন বুনছে শত শত পরিবার

পরিবারের চাহিদা মেটাতে একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ হতো লিচুর। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করছেন চাষিরা। প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য পাওয়ায় গ্রামের শতভাগ মানুষই এখন লিচু চাষের সঙ্গে জড়িত। শুধু লিচু চাষ করেই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন এ গ্রামের কয়েকশ মানুষ। গ্রামটি এখন লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত। বলছি, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর কথা।

এ গ্রামের বাড়ির আঙিনা, মেঠোপথ থেকে কৃষিজমি—সবখানে এখন মিষ্টিমধুর গোলাপি রঙের লিচুর দেখা মিলবে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্বদিকে এগোলেই এমন দৃশ্য নজরে পড়বে। এ গ্রামে ছোট-বড় দুইশ বাগানের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনা ও কাঁচা-পাকা সড়কের পাশে শোভা পাচ্ছে শত শত লিচু গাছ। সুবজ পাতার ফাঁকে ঝুলছে থোকায় থোকায় রঙিন লিচু। বলা হচ্ছে, প্রায় ২০০ বছর আগে চীন প্রবাসী এক ব্যক্তি প্রথমে চীন থেকে এ জাতের লিচু চারা নিয়ে আসে। 

কালক্রমে এমন অসাধারণ জাতের লিচু চাষ ও সুখ্যাতি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আর এ লিচুর জাতটিও মঙ্গলবাড়িয়া নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এই গ্রামটিতে ছোট বড় ৭ হাজারের অধিক লিচু গাছ আছে। মঙ্গলবাড়িয়া ছাড়াও আশপাশের কুমারপুর, নারান্দী ও হোসেন্দী গ্রামের প্রায় ৩ হাজার পরিবার এখন লিচু চাষের আয়কেই জীবিকা নির্বাহের এবং আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আর মধুমাসে এ লিচু সংগ্রহ করতে গাড়ি হাঁকিয়ে এসে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে লাইন ধরেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। এ ছাড়াও পাইকারদের মাধ্যমে দেশের রাজধানী ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে এ লিচু। এ বছর প্রতি একশো লিচু আকার বেধে বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা।


লিচু চাষি মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের ছফির উদ্দিন বলেন, প্রতিবছর আমাদের গ্রাম থেকে মঙ্গলবাড়িয়া জাতের লিচুর যেমন চাহিদা থাকে তেমনি চারার চাহিদাও কম না। এ বছর লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। যারা প্রতিবছর লিচু ক্রয় করতে আসে তাদের একটা আক্ষেপ থাকে অতিরিক্ত দামে লিচু বিক্রি করা হয়। সে জায়গা থেকে এবার দাম অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে, ৫০০-৬০০ টাকায় লিচু ক্রয় করতে পারবে। সিন্ডিকেটের কারণে লিচুর দাম বেশি রাখা হতো, এবার সেই সিন্ডিকেট নেই, স্থানীয় উদ্যোক্তা বেড়ে যাওয়া সিন্ডিকেট ভেঙে গেছে। মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর কালার, ঘ্রাণ ও স্বাদের ভিন্নতা থাকায় চাহিদা বেশি।


লিচু নিতে আসা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার আশিকুজ্জামান আশিক বলেন, ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর স্বাদ আলাদা। সে জন্য আজকে নিতে এলাম। লিচুটা অনেক রসালো, ঘ্রাণ ও কালার খুব সুন্দর। খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যায়। একশ লিচু ৬০০ টাকায় কিনেছি। বাগান থেকে লিচু কেনার মজাই আলাদা। শুনেছি সিন্ডিকেটের কারণে প্রতি বছর লিচুর দাম বেড়ে যায়। আমরা চাই প্রশাসন যেন সিন্ডিকেটের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেন।


লিচু ব্যবসায়ী তৌহিদ মিয়া বলেন, আমি ৫০ বছর ধরে মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর ব্যবসা করে আসছি। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর ১০৫টি গাছ ক্রয় করেছি। দামও অনেক কম। গত বছর একশ লিচু সর্বনিম্ন ৮০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছি। এবার ৫০০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি করতেছি। এই লিচুর মিষ্টি-ঘ্রাণ আলাদা হওয়ায় চাহিদা বেশি। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন গাড়িতে এসে লিচু নিয়ে যায়। লিচুর সময় এই এলাকায় ঈদের আনন্দ বিরাজ করে।


পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-ই-আলম বলেন, ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম যুক্ত পুষ্টিমান সম্পন্ন এ জাতের লিচুর কলমজাত চারা এখন মঙ্গল বাড়িয়া লিচুর জাত হিসেবে আশপাশের এলাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারপুর, নারান্দী এবং হোসেন্দী এলাকায় যে লিচু হয় সেগুলো মঙ্গলবাড়িয়া লিচু নামে পরিচিত। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশা করছি ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে। কৃষকদের লিচুর মৌসুম শুরু হওয়া থেকে উঠান বৈঠকসহ সামগ্রিক সময়ে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।


সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ