বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫

আড়াইশ বছরের পুরনো মাছের মেলায় জামাই শ্বশুরের ভীড়

আড়াইশ বছরের পুরনো মাছের মেলায় জামাই শ্বশুরের ভীড়

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বিনিরাইল (কাপাইস) গ্রামে একদিনের মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনব্যাপী এই মেলায় ঘিরে ওই গ্রামে চলেছে আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী। এই মেলায় আছে একের ভেতর দুই। এক কথায় রথ দেখা আর কলা বেচা। কারণ এটা জামাই মেলা হলেও, এখানে ছোট-বড় মাছের বিরাট মেলা বসে।মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের মধ্যে বিনিরাইল (কাপাইস) গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য। বক্তারপুর, জামালপুর ও মোক্তারপুর ইউনিয়নের চার মোহনায় বিনিরাইল (কাপাইস) গ্রামে বসে এ মাছের মেলা।উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ছাড়াও গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। প্রতি বছর পৌষ-সংক্রান্তিতে এক দিনের জন্য এ মেলা জমে উঠে।

মেলা প্রাঙ্গণে প্রায় ৩ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মাছের মেলায় সামুদ্রিক পাখি, চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, ইলিশ, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশী মাছও। মেলায় বিভিন্ন ধরনের মাছের পাশাপাশি ফল, খেলনা, বিভিন্ন প্রকারের আচারসহ সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বালিশ মিষ্টি ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। বালিশ মিষ্টি সর্বোচ্চ তিন কেজি এবং সর্বনিম্ন এক কেজি।আড়াইশ বছরের বেশি সময় ধরে কালীগঞ্জের বিনিরাইল (কাপাইস) গ্রামে পৌষ মাসের শেষ দিনে বসে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। মেলাটিকে ঘিরে ভিড় জমায় দূর-দূরান্ত থেকে মাছ কিনতে আসা জামাই, এলাকার শ্বশুর ও উৎসুক দর্শনার্থীরা। মেলার প্রধান আকর্ষণ প্রায় লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৯ ফুট লম্বা ৯২ কেজি ওজনের পাখির মাছ। একদিনের মাছের মেলায় লাখো মানুষের ঢল। মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে মেলা। তবে এ মেলায় জামাই-শ্বশুরের উপস্থিতি বেশি থাকলেও এটাকে সবাই মাছের মেলা বলেন।গাজীপুর চৌরাস্তার মা মৎস্য আড়তের মালিক শেখ সোহাগ ইসলামের মাছের স্টল ঘিরে ক্রেতাদের জটলা লেগে আছে। ৯ ফুট লম্বা ৯২ কেজি ওজনের পাখি মাছ দেখতে জামাই, উৎসুক দর্শনার্থী এবং ক্রেতাদের ভীড়। বিক্রেতা প্রতি কেজি ৮০০ টাকা মূল্যে পাখি মাছের দাম হেঁকেছেন ৭৫ হাজার টাকা।

ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় রামচন্দ্রপুর এলাকার জামাই খায়রুল বাশার হিরণ মাছটির দাম ৪০ হাজার টাকা বলছেন। কিন্তু বিক্রেতা বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না। চলছে দর কষাকষি। ক্রেতার চেয়ে উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছেন মাছটি দেখার জন্য।

মেলা আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক কবির দেওয়ান বলেন, মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, পুরনো এই মেলাকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে রয়েছে নানা ধরণের কথা। তবে ইতিহাস ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে গ্রাম-গঞ্জে এ ধরণের আয়োজন আমাদের চিরায়ত বাংলার রূপই ফুটে উঠে। বিনিরাইলের মাছের মেলাটি স্থানীয় একটি ঐতিহ্য।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন