বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নফল রোজার উত্তম সময়

নফল রোজার উত্তম সময়

রোজার জন্য কিছু হারাম দিন রয়েছে। সেগুলো ছাড়া বছরের যেকোনো দিন নফল রোজা রাখা যায়। দুই ঈদের দিন এবং কোরবানির পরের তিন দিন—এই পাঁচ দিন রোজা রাখা হারাম। মাহে রমজানের রোজা রাখা ফরজ। বাকি যেসব দিনে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে নফল রোজার গুরুত্ব ছিল এবং তিনি রোজা রাখতেন সেগুলোই মূলত নফল রোজার উত্তম সময়। নিচে নফল রোজার উত্তম সময়গুলো তুলে ধরা হলো।

প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার

নবীজি (স.) সোমবার আর বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। এই দুই দিন রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেছেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। আর আমি পছন্দ করি, আমার আমল এমন সময় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার। (সুনানে তিরমিজি: ৭৪৭) সোমবারে রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে নবীজি বলেছেন, এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে, এই দিনে আমাকে নবুয়ত দেওয়া হয়েছে। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

আইয়ামে বিজের রোজা (চান্দ্রমাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখ)

প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজার বিশেষ ফজিলত হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। এই দিনগুলোকে ইসলামি পরিভাষায় ‘আইয়ামে বিজ’ বলা হয়।  আবু জর (রা.)-কে নবীজি (স.) বলেছেন, তুমি যদি প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখতে চাও, তাহলে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখো। (সুনানে তিরমিজি: ৭৬১) এ ছাড়া মাসের যেকোনো তিন দিন রোজা রাখলে সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব হবে মর্মেও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (সুনানে তিরমিজি: ৭৬২)

শাওয়াল মাসের ৬ রোজা

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখে, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল। (সুনানে তিরমিজি: ৭৫৯)

আরাফার দিনের রোজা

আরাফার দিন হলো জিলহজের ৯ তারিখ, কোরবানি ঈদের আগের দিন। এই দিনের রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে নবীজি (স.) বলেছেন, যে আরাফার দিনে রোজা রাখল, আমি আল্লাহর কাছে আশা রাখি, আল্লাহ তাআলা তার আগের এক বছর এবং পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সুনানে তিরমিজি: ৭৪৯)

মহররম ও আশুরার রোজা

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন- ‘রমজানোর পর উত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর উত্তম নামাজ হচ্ছে রাতের নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬৩) 

আশুরা হলো মহররমের ১০ তারিখ। আবু কাতাদা আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে আছে যে, নবী (স.)-কে আশুরার রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন-‘এই রোজা বিগত বছরের কাফফারা হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

আশুরার রোজার বিষয়ে আয়েশা (রা.) বলেন- ‘কুরাইশের লোকেরা জাহেলি যুগেও আশুরার রোজা রাখত। নবী (স.)-ও রাখতেন। এরপর যখন হিজরত করে মদিনায় এলেন, তখন নিজেও এই রোজা রাখলেন অন্যদেরও রাখার আদেশ দিলেন। এরপর যখন রমজানের রোযা ফরজ হলো তখন বললেন- ‘যার ইচ্ছে সে তা (আশুরার রোজা) রাখতে পারে, যার ইচ্ছে না-ও রাখতে পারে।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৫২; সহীহ বুখরি: ২০০২)

শাবান মাসে নফল রোজা

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন- ‘আল্লাহর রাসুল (স.) (অবিরাম) রোজা রাখতেন, যার কারণে আমরা বলতাম, আর বাদ দিবেন না। আবার (অবিরাম) রোজাহীনও থাকতেন, যার কারণে আমরা বলতাম, আর রাখবেন না। আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে রমজান ছাড়া অন্যকোনো মাসে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি। তেমনি দেখিনি শাবানের চেয়ে বেশি অন্যকোনো মাসে রোজা রাখতে।’ (সহিহ বুখারি: ১৯৬৯; সহিহ মুসলিম: ১১৫৬)

অবিবাহিত যুবকদের বিশেষ রোজা

যেসব যুবকের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে অথচ তার কাছে আর্থিক সামর্থ্য নেই, তাকে নবীজি (স.) নফল রোজার রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের জন্য কর্তব্য হলো বিয়ে করে নেওয়া। কারণ বিবাহ চক্ষু অবনত রাখার এবং লজ্জাস্থান হেফাজত রাখার ক্ষেত্রে অধিকতর সহায়ক। তবে তোমাদের মধ্যে যার বিবাহের সামর্থ্য নেই, তার উচিত রোজা পালন করা। কেননা রোজা যৌন চাহিদাকে অবদমিত করে রাখে। (তিরমিজি: ১০৮১)

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন