শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

বাংলাদেশের বাগানে সৌদির খেজুর

বাংলাদেশের বাগানে সৌদির খেজুর

সাত বিঘার খেজুর বাগান। সারি সারি গাছের সবুজ পাতা বাতাসে দুলছে। কিছু গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে পাকা খেজুর। বাগানের অর্ধেকের বেশি অংশজুড়ে চারা গাছ। কয়েকজন এসব গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত। ভাবছেন, সৌদির কোনো বাগানের বর্ণনা দিচ্ছি? একদমই না। এই দৃষ্টিনন্দন বাগান ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার পাড়াগাঁওয়ের গতিয়ারচালায়। এর মালিক স্থানীয় নূরুল ইসলামের ছেলে আব্দুল মোতালেব। ২০০১ সালে সৌদি আরব থেকে খেজুরের বীজ এনে এই স্বপ্নের বাগান গড়েন তিনি। তার দাবি, দেশে তিনিই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সৌদি খেজুরের চাষ শুরু করেন। এছাড়া ‘লিপজেল’ নামে সুস্বাদু খেজুরের নতুন জাতও উদ্ভাবন করেছেন তিনি। বর্তমানে খেজুর ও গাছের চারা বিক্রি করে তার বছরে আয় ৩০ লাখ টাকা।

মোতালেবের খেজুর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, অপূর্ব দৃশ্য-গাছে গাছে পলিথিনে মোড়ানো খেজুর। কিছু পাকা, কিছু আধপাকা। নাসারন্ধ্রে মিষ্টি ঘ্রাণের ছোঁয়া লাগে। গাছের পরিচর্যা করছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। মোতালেব ও তার ছেলে মিজানুর রহমান কাজের তদারকি করছেন।

মোতালেব মাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। সংসারের হাল ধরতে একসময় লেখাপড়া বাদ দিয়ে পাড়ি দিতে হয় সৌদি আরবে। ১৯৯৮ সালে আরবের আলকাসিন শহরের আশরাফ আলীর খেজুর নার্সারিতে যোগ দেন। দুই বছর সেখানে কাজ করেন। তখনই তিনি নিজ দেশে আরবের খেজুর চাষের স্বপ্ন দেখেন। ২০০০ সালের শেষ দিকে দেশে ফেরার সময় মালিকের কাছ থেকে চেয়ে নেন ৩৫ কেজি খেজুর। এজন্য অবশ্য মালিক তার ৬ মাসের বেতন কেটে রেখেছিলেন। ওই খেজুর থেকে তিনি ৩০০টি বীজ পান। এসব বীজ বস্তাবন্দি করে রাখেন। ২৫-৩০ দিনের মাথায় এসব বীজ থেকে ২৭৫টি খেজুর চারা গজিয়ে ওঠে। ২০০১ সালে বাড়ির সামনের ১০ কাঠা জমিতে বাগান তৈরি করে চারাগুলো রোপণ করেন তিনি। বাগানের নাম দেন ‘মোফাজ্জল সৌদিয়া খেজুর প্রকল্প’। পরবর্তীতে কিছু চারা নষ্ট হয়ে যায়। মোতালেব ২৫৫টি খেজুর গাছের সন্তানের মতো যত্ন নিতে থাকেন।

মোতালেব বলেন, যে ২৫৫টি গাছ দিয়ে বাগান শুরু করি, সেখানে মাত্র ৭টি মাতৃগাছ (ফলবান) পেয়েছিলাম। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ গাছ পরিচর্যা করতে গিয়ে আমার ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। সেই টাকার জন্য আমি ৬ বিঘা জমি বিক্রি করেছি। বর্তমানে আমার ৭ বিঘার বাগানে বিভিন্ন বয়সের ৩০০০টি মাতৃগাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৩০০টি বড় গাছ, যেগুলোতে খেজুর ধরছে। এছাড়া ৫৫টি পুরুষ গাছ রয়েছে। এসব গাছে ফল ধরে না।

তিনি জানান, ফেব্রুয়ারিতে খেজুরের ফুল ধরা শুরু করে। পর্যায়ক্রমে সেপ্টেম্বরে ফলন শেষ হয়। তার বাগানে সৌদি আরবের আজোয়া, শুক্কারি, আম্বার ও মরিয়ম জাতের খেজুর রয়েছে। প্রতি কেজি আজোয়া ৩ হাজার টাকা, শুক্কারি এক হাজার টাকা, আম্বার ২ হাজার পাঁচশ টাকা ও মরিয়ম খেজুর ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া প্রতিটি চারা ১৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন।

মোতালেব জানান, তার বাগানে উৎপাদিত খেজুর পুরোপুরি সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাদে-গন্ধে এক। বাগানের খেজুর ও চারা বিক্রি করে বর্তমানে বছরে তার আয় ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেজুর বিক্রি থেকে আসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। বাকি টাকা আয় হয় চারা বিক্রি থেকে। তিনি জানান, বাগানের ব্যয় মেটাতে একসময় যে ৬ বিঘা জমি বিক্রি করেছিলেন সেই জমিসহ মোট ৮ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। 

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ